ইসি আইন নিয়ে সংশয়।খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে সংশয় । সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা স্বস্তিদায়ক কিছু পাচ্ছেন না। ফলে ইসি গঠনে কয়েক দশকের রাজনৈতিক বিরোধের পথ সুগম হবে বলে মনে হয় না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনেক দিন ধরেই বলছেন, সময় কম। তাই আগের দুইবারের ধারাবাহিকতায় আবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আইন বা অধ্যাদেশ কিছুই হবে না। তবে এখন তিনি বলছেন, নতুন আইন পাসের পর ইসি গঠন করা হবে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে নতুন ইসির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সংসদও অধিবেশন চলছে। তবে করোনার কারণে সপ্তাহে দুই থেকে চার দিনের বেশি সেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত সোমবার আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ ৫০ বছর পর সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছেন, কয়েক মাস ধরে আইনমন্ত্রী বলছেন, এত অল্প সময়ে নতুন আইন করা সম্ভব নয়। এখন আবার তাড়াহুড়ো করে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, এটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। খসড়া আইনে যাদের সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার আশা করা যায় না।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নতুন আইন প্রণয়নের কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সুশীল সমাজ ও নির্বাচন কমিশন একাধিকবার আইনের খসড়া তৈরি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছেছে। তবে তা কখনো আমলে নেওয়া হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল এক বিবৃতিতে আইনের খসড়া তৈরি করেন
তিনি অনুমোদনকে আশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, সুশীল সমাজসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যাশা গুরুত্বপূর্ণ।
খসড়া চূড়ান্ত করে আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আইনের খসড়া অবিলম্বে প্রকাশের দাবি জানান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও সুশীল সমাজের মতামত ও যাচাই-বাছাই ছাড়া আইনটি পাস হলে এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হবে না।
এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ অ্যান্ড ড্রাফটিং উইংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলেও তারা অন্ধকারে রয়েছেন। এমনকি খসড়া আইনের কপিও সংশ্লিষ্টদের হাতে নেই। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দেওয়া ব্রিফিং ছাড়াও খসড়া আইনে কী আছে তা নিয়েও অন্ধকারে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়াটি এখন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সংসদে উত্থাপনের পর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তা সুপারিশ আকারে সংসদে উঠে আসবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এটাই বড় কথা। খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় পাঠানোর আগে সব রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে সবাই মতামত দিতে পারত; কিন্তু তা করা হয়নি। মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর কার্যাদেশ পরিবর্তন করা খুবই কঠিন।
রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। আইনের খসড়া না দেখে এখনই কিছু বলা যাবে না।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ইসি গঠনের আগে দুবার সার্চ কমিটি করায় সরকার নিজেদেরকে সার্চ কমিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা করেছিল। তবে গত ১০ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের শুরু থেকেই নতুন আইন প্রণয়নে দেশে-বিদেশে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলীয় জোটের অনেক সদস্য, সরকারের “মিত্র” হিসাবে পরিচিত, এই আইনের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া ঢাকায় অবস্থানরত বন্ধুপ্রতীম দেশের কূটনীতিকরাও ইসি গঠনে নতুন আইন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এমতাবস্থায় সরকার তাদের অবস্থানে অনেক পরিবর্তন এনেছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া আইনে যাদের সার্চ কমিটিতে রাখা হচ্ছে তাদের সরকারের পছন্দের বাইরে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি বলেছে, নতুন আইন ‘জেই লাউ সে কদু’। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমস্যা নেই।