ইসির সংলাপ।সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে ইভিএমে ভোট চায় আ-লীগ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ‘অতীত ও বন্ধ অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য সংবিধানের লঙ্ঘন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। মনে রেখ. একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয়; ৩০০টি আসনে ইভিএমে ভোট। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের আগে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি গতকাল সকালে সংলাপে অংশ নেয়। তারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে বলেন, জনগণ ও জাপা ইভিএমের ওপর আস্থা রাখতে পারে না।
এ অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, সংলাপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দলই ইভিএমে বিশ্বাস করে না। এ সময় তিনি সরকারি দলকে অন্য সব দলের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা জানান।
সংলাপে আওয়ামী লীগের দেওয়া ১৫ দফা প্রস্তাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ইসির তত্ত্বাবধানে রাখার কথা রয়েছে। সংলাপ শেষে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, তাদের দলীয় অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের নির্বাচনের মতোই আছে। নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভা যথারীতি কাজ করবে। নিয়ম হলো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার তদারকি করবে ইসি।
সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলের সদস্য ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইসিকে সার্বিক সহযোগিতা করা নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব। . আমরা তাই বলেছি।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে নেওয়ার প্রস্তাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অবস্থানের পার্থক্য রয়েছে।
সংলাপে আওয়ামী লীগ বলেছে, তাদের সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার ইসিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেনি। বরং ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, কোনো দল বা প্রার্থীর অনুগত বা অনুগত বলে পরিচিত কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে আশা প্রকাশ করা হয়, ইসি পর্যবেক্ষক নিয়োগে আইন, বিধিবিধান ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট চুরি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের বিকল্প নেই। বর্তমানে ইসির হাতে দেড় লাখের বেশি ইভিএম মেশিন থাকায় ৪৩ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ইসি সচিবালয়, এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিযুক্ত দলীয় কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া, ছবিসহ সঠিক ভোটার তালিকা, কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভোটগ্রহণের দিন, নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থাগুলো। বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসার পদে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা, মনিটরিং। আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমতি, পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ করা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সব ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। ইসির, নির্বাচনী সরকারের পরিধি অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। টেকসই সাংবিধানিক, আইনি এবং নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা।
জাতীয় পার্টি (জাপা) ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে: ইভিএমে দেশের মানুষের আস্থা নেই দাবি করে দলটি বলেছে, সংসদে ইভিএম ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই।