• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ইসির দৃষ্টিতে নির্বাচনকালীন সরকার  রাজনৈতিক বিষয়

    কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংলাপ আয়োজন নিয়ে শোরগোল করলেও পূর্বসূরিদের মতোই অবস্থান নিয়েছে। সংলাপে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উত্থাপন করলেও ইসি বলেছে, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

    তফসিল ঘোষণার পর কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে ইসির অধীনে আনার প্রস্তাবও সংবিধানের আলোকে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন তারা। এর আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কে এম নুরুল হুদা কমিশনও সংলাপে বিভিন্ন দলের মতামত নেওয়ার পর বলেছিল, তাদের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ একাধিক দল সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে ইসিকে চিঠি দেয়। এসব দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিগত কমিশনেও তারা সংলাপে কোনো ফল পায়নি।

    সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে সংলাপে ইসির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। ইসির এই সারসংক্ষেপ ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। ইসির পরিচালক জনসংযোগ (যুগ্ম সচিব) এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, কিছু দল ইতোমধ্যে পেয়েছে, যারা পায়নি তারা শিগগিরই পাবে।

    ১৭ থেকে ৩১ জুলাই নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপিসহ ৯টি দল তা প্রত্যাখ্যান করে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইসির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রকাশিত হলেও বর্তমান কমিশন আয়োজিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সংলাপের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়নি।

    ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ইসির এই অবস্থান সম্পর্কে বলেন, নির্বাচন কমিশন সূক্ষ্মভাবে তার দায় এড়াতে চাইছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু যৌক্তিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী সরকার বা ইসির অধীনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ন্যস্ত করার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার সাথে জড়িত। ইসি যদি প্রস্তাবগুলোকে অযৌক্তিক মনে করে- সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। আবার তারা যদি মনে করেন এগুলো যুক্তিসঙ্গত, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারেন। সংবিধানের দোহাই দিয়ে আগের দুটি নির্বাচন কমিশনের মতো আরেকটি নির্বাচন কাম্য হতে পারে না।

    ইসির এই অবস্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসন সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিদ্যমান দলীয় সরকার কাঠামো সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। গত দুটি নির্বাচন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসির এই অবস্থান জাতিকে আরেকটি খারাপ নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। অন্য কোনো পদ্ধতি সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা ইসি নিজেই জানে। তাই তাদের আড়াল করে আরেকটি বাজে নির্বাচন অনুষ্ঠান মোটেও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। অবাধ নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলাও ইসির দায়িত্ব।

    সংলাপের সারাংশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবগুলোকে ১০ ভাগে ভাগ করে তাদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দলগুলোর আপত্তি ও সমর্থনের কারণে দলগুলো এখনো কোনো দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও আগের দিন রোববার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়নি। বর্তমানে ইসির সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষমতা রয়েছে। ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মঙ্গলবার আবারও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইসি। এ সপ্তাহেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

    সিইসির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, অধিকাংশ দলের পরামর্শ ছিল সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করে ভোটের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। কমিশনের অভিমত, সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও কোনো দলকে অংশগ্রহণে বাধ্য করতে পারবে না এবং এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা তারা নেবে না।

    ডিসিদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে কমিশন বলছে, প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি তারা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।

    এ প্রসঙ্গে ইসিও বলেছে, নির্বাচনে জয়-পরাজয় অনিবার্য। প্রার্থীদের পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। দেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতিতে অর্থ ও পেশিশক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহারের মাধ্যমে পাপাচার হিসেবে টিকে আছে।

    মন্তব্য করুন