ইসির খসড়া আইন অনুযায়ী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতেই
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের খসড়া আইনে সার্চ কমিটির কাঠামো ও কমিশনারদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটি প্রতিটি পদে দুজনের নাম সুপারিশ করতে পারবে। তারা এই সুপারিশ সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। সার্চ কমিটি গঠনের সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ পাঠাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। বাকি কাজ রাষ্ট্রপতির নামে করা হলেও নির্বাহী শাখার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই করতে হয়। তাই ইসি নিয়োগের সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সুশীল সমাজের প্রস্তাবে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন এমপি এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত একজন এমপি থাকতে হবে। কিন্তু খসড়া আইন, যা মন্ত্রিসভা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিককে বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতিকে এই দুই সদস্যকে মনোনয়ন দিতে হয়।
এর আগে শামসুল হুদা কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সার্চ কমিটি প্রতিটি পদে তিনজন প্রার্থীর নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করবে। পরে সংসদীয় উপদেষ্টা কমিটি (সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে) তা পরীক্ষা করে রাষ্ট্রপতির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠাবে।
সংসদীয় কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভাপতিত্ব করেন স্পিকার। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য দলের সিনেটরদের, সংসদের নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা সহ, কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। বর্তমানে কার্য-উপদেষ্টা কমিটিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ প্রায় সব দলের সদস্য রয়েছে।
মো. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া আইনের খসড়ায় রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দেওয়া। তবে সংসদকে পাশ কাটিয়ে এত বড় আইন পাস করতে চান না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
কিন্তু খসড়া আইনে সংসদ সদস্যদের সার্চ কমিটিতে ভূমিকা রাখতে দেওয়া হয়নি।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ নীতিগত অনুমোদন দেয়। সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিলটি সংসদে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিলে অর্থ ব্যয়ের বিষয় থাকলে সংসদে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন। বুধবার বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য বঙ্গভবনে পাঠানো হয়। বিলটি আজ, বৃহস্পতিবার বা আগামী রবিবার সংসদের আইন শাখায় পৌঁছাতে পারে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে নতুন ইসির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সংসদে খুব দ্রুত আইন পাসের অনেক নজির রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটিতে না পাঠিয়েই বিল পাস হয়েছে। শিগগিরই বিলটি পাস হবে বলে আশা করছেন তারা। সেক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো নাও হতে পারে। ফলে আইনসভার সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা মন্তব্য করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
খসড়ায় সর্বশেষ দুটি সার্চ কমিটি ও ইসিকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আগের সার্চ কমিটি গঠন ও কমিশনার নিয়োগ বৈধ বলে বিবেচিত হবে বলে জানানো হয়েছে। খসড়া আইনে নির্বাচন কমিশন আইন বাস্তবায়নের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারের কাছে থাকার কথাও বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি এবং ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দুটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাবেক সিইসি মো. কাজী রকিবউদ্দিন ও বর্তমান সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে দুটি কমিশন গঠন করা হয়। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা অভিযোগ ওঠে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এমনকি বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে গঠিত তদন্ত কমিটি কমিশনার পদে যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দায়ীত্বে থাকবে।