• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ইসির ইভিএম ভবানা ভেস্তে যাচ্ছে

    আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক হারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা ৩০০টি সংসদীয় আসনের ১৫০টির সবকটিতে ইভিএমে ভোট দিতে চেয়েছিল। বর্তমান বাস্তবতায় একযোগে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ইসির নেই। ফলে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবও তৈরি করে ইসি। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সেই প্রস্তাব আসছে না।
    ইসি এর আগে বলেছিল, জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রকল্প অনুমোদন না হলে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে ইভিএমের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা থেকে সরে আসতে হয়েছে ইসিকে। গত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে সার্বিক ভোটের হার ছিল ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর বিপরীতে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
    ইসি জানিয়েছে, বর্তমানে পাওয়া ইভিএম দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০টি আসনে ভোট নেওয়া সম্ভব। গত ২২ ডিসেম্বর পটুয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম কেনার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক বরাদ্দের অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমানে ইসির ৫০ থেকে ৬০টি আসনে ইভিএম নির্বাচনের সক্ষমতা রয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে নতুন মেশিন কেনা ও ইভিএম বসানোর পরিকল্পনা করছে কমিশন।
    এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী একনেকের সভায় আটটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। একনেকে উপস্থাপনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের তৈরি প্রকল্পের তালিকা হাতে রয়েছে। ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পের নাম তালিকায় নেই। অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই। তবে ইসি থেকে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব গত রোববার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে ওই বিভাগের সদস্য ও সরকারের সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম গতকাল বলেন, ইসির ডিপিপিতে পরিকল্পনা কমিশনের কিছু সুপারিশ ও পরামর্শ রয়েছে। এর আলোকে তারা ইসির কাছ থেকে আরডিপিপি পেয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।
    প্রকল্পের সময়ও অনিশ্চিত। কারণ, করোনার পর থেকে দুই বছর ধরে অনিয়মিতভাবে অনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২২ নভেম্বর। অর্থাৎ দেড় মাসেরও বেশি সময় পর আগামী মঙ্গলবার বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অনিয়ম ব্যবধান চলতে থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক হবে না। পরবর্তী বৈঠক মার্চের শুরুতে হতে পারে।
    এমন বাস্তবতায় সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ইঙ্গিতও দিয়েছে ইসি। প্রকল্পে অগ্রগতির অভাবের কথা স্বীকার করে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা গত রোববার বলেন, প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগে প্রকল্প অনুমোদন না হলে নতুন মেশিন কেনা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে ইসির হাতে থাকা ইভিএম দিয়েই ভোট নেওয়া হবে। বাকি আসনগুলোতে সাধারণ ব্যালটে ভোট হবে। মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এক বিবৃতিতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, দেড়শটি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ সম্ভব নয়। সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বদ্ধপরিকর। ইভিএম বা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। তবে ইসি বুঝবে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে ইভিএম বাজেট হচ্ছে না।
    পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইভিএম কেনা সংক্রান্ত ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল্যায়নে বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে কমিশনের সংশ্লিষ্ট আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যয় দিতে রাজি কিনা সে বিষয়ে অর্থ বিভাগের কাছে স্পষ্ট মতামত চাওয়া হয়েছে। ইসির সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাওয়া হয়েছে। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যয় বজায় রেখে অন্যান্য ব্যয় কমানোই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক ব্যয়, সেবা, সম্মানী এমনকি জমি অধিগ্রহণের মতো খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু অবশেষে প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) তালিকাভুক্ত হয়েছে। ডিপিপি সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার সুপারিশের ভিত্তিতে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের পর নতুন এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চলতি অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপির তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

    মন্তব্য করুন