জাতীয়

ইতালীয় কোম্পানি এটিআই লুকোচুরি করছে

বিমানের ডি-চেক (রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষা) করার জন্য বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ৭৭৭ বিমান গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইতালির রোম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল। বিমানের একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী প্রক্রিয়াটি সরাসরি দেখার জন্য ইতালিতে পৌঁছেছেন। তবে, তাকে রোম বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও ১০ জন প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ান ইতালীয় কোম্পানির কাজ তদারকি করতে ইতালি যেতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ইতালীয় কোম্পানি ডি-চেক নিয়ে লুকোচুরি খেলছে।
প্রতি ১০ বছরে একবার ডি-চেক করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি একটি বিমানের সবচেয়ে বড় রক্ষণাবেক্ষণ পরীক্ষা। ডি-চেকে, বিমানটি সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করা হয়, পরিদর্শন করা হয়, মেরামত করা হয় এবং প্রয়োজনে প্রতিস্থাপন করা হয়। ডি-চেককে ‘হেভি মেইনটেন্যান্স ভিজিট’ বা এইচএমভি ও বলা হয়। এটি একটি অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। যেহেতু বাংলাদেশের এত উচ্চমানের রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা নেই, তাই এই কাজটি সাধারণত বিদেশে করা হয়। একবার ডি-চেক করতে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা খরচ হয়।
ইতালির এটিআই টেকনোলজিকে বিমানের ৭৭৭ বিমান ডি-চেক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে এই অর্ডার পেয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানের ১০ জন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান ইতালিতে গিয়ে পুরো কাজের প্রক্রিয়া তদারকি করার কথা। এরই অংশ হিসেবে, বিমানের প্রকৌশলী রুহুল কুদ্দুস ইতিমধ্যেই ইতালিতে গেছেন। তিনি রোমের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
তবে, তাকে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা ছাড়পত্র বা নিরাপত্তা পাস ঠিকাদার এটিআই টেকনোলজি প্রদান করার কথা। কিন্তু যেহেতু প্রকৌশলী এই পাস দিতে পারেন না, তাই তিনি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তদারকি করতে পারছেন না। এদিকে, রুহুল কুদ্দুস যেহেতু সিকিউরিটি পাস পান না, তাই ভিসা পাওয়ার পরেও বিমানের আরও ১০ জন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান রোমে যেতে পারছেন না।
বাংলাদেশ বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতালীয় ঠিকাদার এটিআই টেকনোলজি বিমানকে একটি ইমেল বার্তায় জানিয়েছে যে বিমানের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দৈনন্দিন কার্যক্রম নথিভুক্ত করে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তারা দাবি করেছে, ‘সমস্ত কাজ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী করা হচ্ছে এবং কোনও বিরতি নেই।’
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের অনুপস্থিতিতে যে কাজ চলছে তা চুক্তি এবং প্রোটোকল অনুসারে করা হচ্ছে না। উভয় পক্ষ এখন বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছে। জানা গেছে যে এই ডি-চেকের জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ৭০ লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে হবে।
বিমান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ বোয়িং-৭৩৭ মডেলের একটি বিমানের (এস-২ এএফএম) ‘ডি-চেক’ সম্পূর্ণভাবে নিজেরাই সম্পন্ন করেছে। সেই সময় বিমানের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে, এর ফলে দক্ষ জনবল তৈরি হবে এবং কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এমন ঘোষণা দেওয়ার পরেও তাদের বিমান বিদেশে ডি-চেকিংয়ের জন্য পাঠানো তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিমান সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, বিমানের বিভিন্ন ধরণের বিমান রয়েছে। বিমান ৭৩৭টি বিমান ডি-চেক করতে সক্ষম। কিন্তু ৭৭৭টি বিমান ডি-চেক করতে হলে বিদেশের আশ্রয় নিতে হয়। তিনি বলেন, বিমানের ৭৭৭টি বিমান ডি-চেক করার জন্য গত মাসে ইতালিতে পাঠানো হয়েছিল। এই কাজের জন্য বিমানের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা নিরাপত্তা পাস না করায় যেতে পারেনি। তারা যদি এক-দুই দিনের মধ্যে পাস করে তবে তারা যাবে।