ইউপি নির্বাচন সহিংস ভোটে আরও ১০ জন প্রাণ হারালেন। পাঁচ ধাপে মোট ১০২ জন
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বগুড়ায় পাঁচজন এবং চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ ও মানিকগঞ্জে একজন করে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সংঘর্ষে প্রার্থীসহ অন্তত দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। এ পর্যায়েও বরাবরের মতো জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ভোট স্থগিত করতে হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালায়। এজেন্টদের মারধর, ভোটার নিবন্ধনে বাধা, নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারার মতো অনিয়ম হয়েছে অনেক জায়গায়। ভোট কারচুপির অভিযোগে অন্তত তিনজন নির্বাচন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে বুধবার পর্যন্ত ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত বছরের ২১ জুন প্রথম দফার ভোটের দিন তিনজন নিহত হন। এরপর ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় সাতজনের মৃত্যু হয়। ২৬ নভেম্বর তৃতীয় দফার ভোটে নয়জন নিহত হন। ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ দফায় মারা যান তিনজন। বুধবার পর্যন্ত, সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২। বাকি মৃত্যুগুলি ভোটের মাঝখানে বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটেছে। বগাতলী উপজেলার বলাইহাদী ইউনিয়নের কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের পর স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক নারীসহ চারজন নিহত এবং অন্তত তিনজন আহত হন। নিহতরা হলেন- কালাইহাটা মধ্যপাড়া গ্রামের মধ্যপাড়ার খোকন মণ্ডলের স্ত্রী কুলকুস বেগম (৪৫), কালাইহাটা পশ্চিমপাড়ার আবদুর রশিদ (৪৮), কালাইহাটা মধ্যপাড়ার আলমগীর হোসেন (৩৫) ও খোরশেদ আকন্দ (৬৫)। আহতদের মধ্যে তিনজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পুলিশ শুধু কুলসুম বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে তাদের স্বজনরা সাংবাদিকদের আরো তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোট বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীরা কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেরাও করে, ফলাফল অন্যত্র ঘোষণা করা হবে এই আশঙ্কায়। পরে সন্ধ্যায় তারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ওই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনুস আলী ফকিরের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার নির্দেশনা রয়েছে। তাই অন্য কোথাও এক কেন্দ্রের ভোট গণনার সুযোগ নেই। বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ইট-পাটকেল ছাড়াও শাজাহানপুরের ইউএনও আসিফ আহমেদকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাঁচাতে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানি না। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কারা তাদের গুলি করেছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এর আগে বগুড়ার গাবতলীর রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে জাকির হোসেন (৪০) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জাগাই উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে। জাকির হোসেন জাইস উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, দুপুর ২টার দিকে সহিদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সেখানে সদস্য প্রার্থী ফেরদৌস হাসান মিঠু ও ডা. জাকিরকে মাথায়, পিঠে ও পাঁজরে ছুরিকাঘাত করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। জাকির সহিদুলের সমর্থক ছিলেন। গাবতলী থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চাঁদপুরের হাইমচরে ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নীলকমল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাহেরচর এলাকায় দুই সভাপতি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম নিশ্চিত করা যায়নি। পুলিশের ধারণা, তিনি বহিরাগত। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সিনহার এলাকায় একটি কেন্দ্রের কাছে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম অঙ্কুর দত্ত (৩০)। সে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের সিংগাড়া গ্রামের নেপাল দত্তের ছেলে।