ইউজিসির প্রকল্প নিয়ে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদনে ৪৬টি প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি সমান হওয়ায় তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আনুমানিক হিসাব সংক্রান্ত কমিটি এই তথ্য পুনঃ যাচাইকরণ এবং তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
মঙ্গলবার সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো, শিক্ষার মান ও গবেষণাসহ ৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইউজিসির অধীনে এই সমস্ত প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি সমান। এটা অসম্ভব বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির সন্দেহ, টেবিলে বসেই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং বারবার সময় বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কমিটি।
সভার কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে, ১৬টি ৫০ শতাংশের নিচে এবং ২২টি ৫১ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে।
সূত্র জানায়, কমিটির বৈঠকে ইউজিসি যে প্রতিবেদন পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, চলমান সব প্রকল্পের প্রকৃত ও আর্থিক অগ্রগতি হুবহু একই। কমিটির একাধিক সদস্য এ ধরনের মিল নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, দুই ক্ষেত্রে অগ্রগতি সমান হলেও সব ক্ষেত্রে সমান হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঘটনাভিত্তিক প্রতিবেদন না দিয়ে টেবিলে বসেই এমনটি করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে উপস্থিত ইউজিসি প্রতিনিধিরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ না হওয়া এবং বারবার সময় বাড়ানোয় প্রকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বাস্তবায়নে কোনো সাফল্য না থাকলেও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশে গিয়ে গাড়ি কেনার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, ইউজিসির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে প্রকৃত ও আর্থিক অগ্রগতি একই। তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তাদের কাজে গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেছে কমিটি। প্রকল্প ব্যবস্থাপকদের যোগ্যতা যাচাই করে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছে কমিটি। একটা জিনিস খুব কমন- প্রজেক্ট হলেই গাড়ি কেনার প্রবণতা বেশি। প্রকৃত অগ্রগতি নেই; কিন্তু আর্থিক খরচ বেশি। সব মিলিয়ে অসহায় লাগছিল। কোনোটাই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির দায় কে নেবে? এ জন্য ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কার্যপত্রে দেখা গেছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি সমান। এর অগ্রগতি হয়েছে ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ২৬.০২ শতাংশ। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। বুয়েটের শিপ মডেল টেস্টিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৪.৪৫ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ১০.৩৯ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৪.৭১ শতাংশ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৬৩.০৭ শতাংশ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৯৯.০৬ শতাংশ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।