ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আমদানির পথ খুলল।বাংলাদেশের জন্যও সুখবর
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানি চালু হয়েছে। শুক্রবার দেশটির খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু করতে জাতিসংঘ, রাশিয়া, ইউক্রেন ও তুরস্ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের জন্য একটি বড় খবর। চুক্তির খবরে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম তিন শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ মোট গমের ২৫ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আমদানি করে।
তুরস্কের দুই মাস কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর গতকাল ইস্তাম্বুলে বহু প্রতীক্ষিত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে । চুক্তিটি কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় বন্দরগুলির মাধ্যমে শস্য রপ্তানির অনুমতি দেবে। দেশে প্রায় আড়াই লাখ টন খাদ্যশস্য রয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর গুতেরেস একে ‘আশার বাতিঘর’ এবং ‘বিশ্বের জন্য চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এরদোয়ান বলেন, এর ফলে বিশ্বে খাদ্য সংকটের অবসান হবে।
চুক্তির মেয়াদ ১২০ দিন বা চার মাস। উভয় পক্ষ সম্মত হলে মেয়াদ নবায়ন করা যেতে পারে। চুক্তির বাস্তবায়ন তদারকির জন্য জাতিসংঘ, তুরস্ক, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ইস্তাম্বুলে একটি সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চুক্তিটি কৃষ্ণ সাগর দিয়ে রাশিয়ার খাদ্যশস্য এবং সার রপ্তানির সুবিধাও দেবে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ গম রপ্তানিকারক। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। ফলস্বরূপ, কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
চুক্তি অনুসারে, রাশিয়া খাদ্যশস্য বহনকারী ইউক্রেনের জাহাজগুলিকে অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। ইউক্রেন যাতে অস্ত্র হাতে না নেয় সে সুযোগে তুরস্ক নজরদারি করবে। ফলে পাঁচ মাস পর প্রথম কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে ইউক্রেন। তবে পাঁচ মাসের যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণ সাগরের পানি খনি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে অবিশ্বাস চরমে পৌঁছেছে। কিয়েভ বলেছে যে তারা রাশিয়ার সাথে সরাসরি কোনো চুক্তি করেনি। তুরস্ক ও জাতিসংঘের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য সুখবর: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক গমের চাহিদা ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এর মধ্যে উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টন। সে অনুযায়ী বাকি ৫৮ থেকে ৬২ লাখ টন গম আমদানি করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ শস্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, বিশ্বের মোট গমের চাহিদার ২৯ থেকে ৩০ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন সরবরাহ করে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সরবরাহের ঘাটতি সংকট তৈরি করে। এখন ইউক্রেন গম রপ্তানির সুযোগ পেলে তা হবে গোটা বিশ্বের জন্য ইতিবাচক। তবে যুদ্ধে দেশটির অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই সময়মতো রপ্তানি পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে কি না সন্দেহ। তা ছাড়া অবিক্রীত গমের মান ভালো আছে কি না তাও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। কোনো কোনো বছরে এই দুই দেশ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। তবে ইউক্রেন থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। এখন আমদানির সুযোগ পেলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। দেশের বাজারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।