জাতীয়

আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, আজ পবিত্র হজ

পাঁচ দিনব্যাপী হজের মূল অনুষ্ঠান মঙ্গলবার। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে জীবনের সব গুনাহ মাফের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ৪৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সারা বিশ্বের ২৫ লাখ মুসলমান আজ আরাফাত ময়দানে সমবেত হবেন। করোনা মহামারীর পর হজে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হচ্ছে।

এই দিনে তালবিয়্যাহ অর্থাৎ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ (আমি উপস্থিত হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপস্থিত, আপনার কোন শরীক নেই, আমি উপস্থিত হলাম, নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা এবং সকল নিয়ামত একমাত্র আপনার জন্য, সমস্ত সাম্রাজ্য আপনার এবং আপনার কোন অংশীদার নেই) শব্দে পুরো আরাফাত ময়দান কম্পিত হতে থাকবে।

আজ (সৌদি আরবে ৯ই জিলহজ) মহান আল্লাহর দরবারে আগত মুসলমানরা হজের দ্বিতীয় রুকন পালনের জন্য সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ময়দান আরাফাতে সমবেত হবেন। হজযাত্রীরা এই ময়দানের চারপাশে হলুদ বোর্ড দ্বারা চিহ্নিত এলাকার ভিতরে থাকবেন, যা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিদায় হজের স্মৃতিচারণায় পূর্ণ। এখানেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। এতে হজযাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রায় সব সময় জপতে ব্যস্ত থাকে। তালবিয়া পড়া।

তিন দিকে পাহাড়ে ঘেরা ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত) অবস্থিত। এই পাহাড় দোয়া কবুলের স্থান। এ কারণে কিছু হজযাত্রী জাবালে রহমত গেলেও ইবাদতে ব্যস্ত থাকবেন। কিছু হজযাত্রী আরাফাত ময়দানে উপাসনার জন্য যেকোনো সুবিধাজনক স্থান বেছে নেবেন, যা প্রায় দুই মাইল লম্বা এবং দুই মাইল চওড়া, অর্থাৎ প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এই অঙ্গনে একটি উঁচু স্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভটি দোয়া কবুলের স্থানও বটে। প্রথম পিতা, প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এবং প্রথম মা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনরায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। এ জন্য তারা এ অঙ্গনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হিজরি সন মোতাবেক ১৪৩৪ বছর আগে (১০ই হিজরি) এই ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী, বিশ্বের মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের খুতবা দেন। এ কারণে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত না থাকলে হজের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না। তাই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে আসার পর যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাত ময়দানে আনার ব্যবস্থা করা হয়। কেউ কেউ হুইলচেয়ারে এই মাঠে আসেন।

আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বর থেকে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হবে। খুতবা দেবেন শেখ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ। তিনি নামাজের ইমামতিও করবেন। হজের খুতবা বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় অনুবাদের জন্য প্রস্তুত। হজের খুতবা শুনবেন হাজীরা। পবিত্র হজের খুতবা শেষে নামিরা মসজিদে সমবেত মুসল্লিরা এক আযান ও দুটি ইকামত জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে জামাতে আদায় করবেন। যদি কারো অবস্থান মসজিদে নামিরা থেকে অনেক দূরে হয় তবে সে নিজ তাঁবুতে যোহর ও আসরের নামাজ আলাদাভাবে আদায় করবে। হজযাত্রীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের কিছু সময় পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করবেন।

হজযাত্রীরা সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মাগরিবের নামাজ আদায় না করে আরাফাত ময়দান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। মুযদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের ওয়াক্তে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সেখানে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত্রিযাপন করবেন। রাতে প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য সেখান থেকে ৭ টি পাথর সংগ্রহ করুন। ভোর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

আগামীকাল ১০ই জিলহজের ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে হাজিরাকে মুজদালিফায় অবস্থান করতে হবে। এরপর তারা মুযদালিফা থেকে মিনায় যাবেন। সেখানে, পুরুষরা মিনার জামারায় (পাথর নিক্ষেপের স্থান) বড় শয়তানের দিকে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ করার পরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উদাহরণ অনুসরণ করে তাদের মাথা মুণ্ডন করবে এবং গোসল করবে। নারীরা চুলের সামনে থেকে প্রায় এক ইঞ্চি কাটবেন। এরপর হাজিরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে ফেলবেন; পশু কোরবানি। এরপর হাজিরা মিনা থেকে মক্কায় যাবেন হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন এবং সুবহে সাদিক থেকে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন।

কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার সাঈ (দৌড়)। সেখান থেকে তারা ফিরে যাবে মিনায়, তাদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ই জিলহজ আবার মিনার জামারায় যাবেন এবং জোহরের নামাজের পর ছোট, মাঝারি ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবার ছোট, মাঝারি ও বড় শয়তানদের দিকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে সন্ধ্যার আগেই মিনা ত্যাগ করবে। ১০ই জিলহজ থেকে ১২ই জিলহজ পর্যন্ত যে কোনো সময় সূর্যাস্তের আগে কাবা শরিফের ফরজ তাওয়াফের মাধ্যমে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।