আরও দু’জন সেনা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্বীকার করেছে
আরও দু’জন সেনা সদস্য রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন| আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দুই সেনার বক্তব্য প্রকাশের পরে নতুন ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে|যাতে আগের দুজনসহ চারজন সেনা সদস্যকে একসাথে রোহিঙ্গা গণহত্যার বর্ণনা দিতে দেখা যায়| সেনাবাহিনীর এক সদস্য তার স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন যে মিয়ানমারের সামরিক আধিকারিকরা বলতেন যে দেশের সমস্ত নৃগোষ্ঠী দাস ছিল|
জানা গেছে, নতুন দুই সেনা সদস্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও সাক্ষ্য দেবেন| তারা হ’ল – চাও মিও অং এবং পার তাও নি| এর আগে জে নাইং তুন ও মায়ো উইন তুন স্বীকার করেছেন|মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিবৃতি দেওয়ার পরে তারা গত সপ্তাহে অনেক চমক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিল| তিনি রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতন ও হত্যার বিবরণ দিয়েছিলেন|
এবার রাখাইনে কর্মরত আরও দুই সেনা চাও মিও অং ও পার তাও নি তাদের দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন| তারা জে নাইং এবং মায়ো উইনের সাথে একসাথে ভিডিওতে স্বীকার করেছেন|চাও মিও অং বলেছেন যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগণের উপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছে| বাহিনীর মধ্যে জাতিগত বৈষম্য রয়েছে| অনেক কর্মকর্তা মাদকাসক্ত| তাদের ওষুধের পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে|পার টাও বলেন নি যে তারা (সেনা অফিসার) আমাদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দাস বলত| তাদেরও এ জাতীয় আচরণ করতে হবে| সেনাবাহিনী নাগরিকদের নির্যাতনের জন্য সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো অস্ত্র ব্যবহার করেছে| এর আগে স্বীকারোক্তিতে মায়ো উইন-টুন বলেছিলেন যে তাকে এবং তার ব্যাটালিয়নকে সেখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালানোর জন্য পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে প্রেরণ করা হয়েছিল|
তিনি ৩০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন| রোহিঙ্গাদের মরদেহ গণকবরে সমাহিত করা হয়| তিনি এক মহিলাকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকারও করেছেন| অপর সেনা সদস্য জে নেং তুন বলেছেন, তাঁর ব্যাটালিয়ন প্রায় ২০ টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে| যারা পথে দাঁড়িয়েছিল তাদের হত্যা করা হয়েছে| তার উর্ধ্বতনরা রোহিঙ্গা মহিলাদের ধর্ষণ করেছেন| দুজনের বক্তব্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটস জানিয়েছে যে তারা দু’জনই প্রায় 160 জন রোহিঙ্গা হত্যায় জড়িত ছিল| গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চার সৈন্যের মধ্যে দুজন হিগ ক্রিমিনাল কোর্টের হেফাজতে রয়েছে| অন্য দুজন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে| এই সৈন্যরা গণহত্যার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারে – যেমন মানবাধিকারকর্মীরা| ফরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী ম্যাথু স্মিথ বলেছিলেন: “আমরা প্রথমবারের মতো আমাদের সামরিক বাহিনীর কারও কাছ থেকে গণহত্যার কথা শুনেছি| তাদের কথায় এটাই স্পষ্ট যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে এই অভিযান শুরু করেছিল| এটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ| রাখাইনের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মি এই চারজনের কথা বলার একটি ভিডিও রেকর্ড করেছে|
প্রাক্তন সেনাপ্রধানের এই স্বীকারোক্তি আন্তর্জাতিক ময়দানে মিয়ানমারের উপর নতুন চাপ ফেলেছে| বিশেষত, দেশের রাজ্য কাউন্সিলর অং সান সু চির অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে| কারণ তিনি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক আদালত আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ারের দায়ের করা মামলায় ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়েছিলেন এবং রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে তার পক্ষে দেশটির পক্ষে কথা বলেছেন| এ কারণে অনেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকারোক্তি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য মিয়ানমারে বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন|
তবে প্রথম দুই সেনা সদস্যের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন এই দায়িত্বটি †Vকানোর চেষ্টা করছে| তারা বলেছে যে দুই সেনা সদস্যের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল| বুধবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন বিবিসি বার্মিজকে বলেছেন যে মেয়ো উইন তুন এবং জে নাইং তুন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য ছিলেন| আরাকান আর্মি তাদের ধরেছিল, হুমকি দিয়েছিল এবং অত্যাচার করেছে এবং তাদেরকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছিল|