জাতীয়

আমের গ্রাম নওগাঁ

দুচোখের নোঙর যতদূর, শুধু মাঠভরা সোনা ধান। ধানই ছিল কৃষকের ধ্যানজ্ঞান। এখন শুধু ধান নয় বরেন্দ্রে আমেরও ফলন হচ্ছে। ধানের চেয়ে আম বেশি লাভজনক- এই আওয়াজ কৃষকদের কানে পৌঁছাছে নওগাঁয় ২০০৭ সালে ঠুনধুমার আমের আবাদ শুরু হয়। অনেক ধানপ্রেমী কৃষক আম চাষে আসক্ত। এক সময় নওগাঁ ধানের সোনার জমি হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন ধানক্ষেতে আম দুলছে চারদিকে। এই পটভূমিতে, বরেন্দ্রের পরিচিত মঞ্চটি তাৎক্ষণিকভাবে বদলে যাচ্ছে। নওগাঁয় আম বিপ্লবের পালে সুসংবাদের হাওয়া বইছে, নেশায় ভরসা চাষিরা। চলতি মৌসুমে প্রধান দুই আম উৎপাদনকারী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে দেশের সবচেয়ে বড় বাজারের তকমা নিতে যাচ্ছে নওগাঁ। এবার শুধু নওগাঁতেই দুই হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এখানে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৬ হাজার টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানের জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ১৬৫ হেক্টর। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ টন। নওগাঁয় ২৯ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮ হাজার ৪৩৫ টন। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে নওগাঁ হতে পারে দেশের আম জগতের নতুন ‘রাজা’। নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদও একই কথা জানান। নওগাঁয় এই মুহূর্তে আমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, নওগাঁ আম চাষে এগিয়েছে। বড় আমের বাজার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আম্রপালি বা বারি-৩ জাতের আম বরেন্দ্র এলাকায় বেশি ফলছে।

আরেকটি ভালো খবর আছে। এবার নওগাঁর আম বিশ্বের আটটি দেশে রপ্তানি হবে। দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সুইডেন, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। ইতোমধ্যে এসব দেশ থেকে ১০০ টন আমের চাহিদা পূরণ হয়েছে।

নওগাঁ পোরশায় এ বছর সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে, জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর। এছাড়া সাপাহারে ১০ হাজার হেক্টর ও পত্নীতলায় ৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সদরে ৪৪৫ হেক্টর, রাণীনগরে ১১০ হেক্টর, আত্রাইতে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫২৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৮০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬১৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪১৫ হেক্টর ও মানহাটে ৪০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। নিয়ামতপুরে।

গত বছর ওয়ালমার্টের চাহিদা তালিকায় ছিল আম্রপালি। আর এ বছর নওগাঁর আম যাবে আটটি দেশে। জানা গেছে, বিদেশে আম পাঠানোর প্রস্তুতির জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। রপ্তানির ১৫ দিন আগে গাছে রাসায়নিক স্প্রে করতে হবে। আগে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আম মোড়ানো হতো।

বেরির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরীফ উদ্দিন বলেন, বিদেশে আম রপ্তানি করতে হলে আম গ্লোবাল গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। ফলে আমার গায়ে দাগ নেই। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। রং সুন্দর. জলরোধী কাগজ ও বিশেষ ধরনের পলিথিনের তৈরি ব্যাগ প্রতিটি আমের শরীরে মোড়ানো থাকে। চীন ও জাপান থেকে এই ব্যাগ আমদানি করতে হয়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, গত বছর ১৫ টন আম রপ্তানি হয়েছিল। এবার দেশি-বিদেশি জাতের সঙ্গে একশ টন আম রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে।

কৃষক সম্পর্কে : প্রান্তিক চাষি আবু হেলাল মোহাম্মদ বলেন, আম চাষে ঝামেলা কম। কলাম পদ্ধতিতে আম গাছ মাত্র দুই বছরে আম দেওয়া শুরু করে। গত বছর তার বাগান থেকে চার লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে। এবার আবারও ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন হেলাল। আশা করছি, ২০ লাখের বেশি আম বিক্রি করতে পারবেন। আগামী ২০ জুন থেকে বিভিন্ন বাগানের আম বিক্রি করা হবে।

মন্তব্য করুন