আমদানির খবরে পেঁয়াজের দাম কমছে
একদিন আগে এক কেজি পেঁয়াজের দাম একশোতে পৌঁছেছিল। আমদানি ছাড়পত্রের খবরে দাম শীর্ষ থেকে নামতে শুরু করেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম কেজিতে ৩০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক বড় ব্যবসায়ী দাম ছাড় দিয়ে তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।
সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ অনেক কম দামে আসবে। এ কারণে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারত ও মিয়ানমার থেকে সারা বছরই কমবেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। কিন্তু এ বছর দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, কৃষকরা যাতে মৌসুমে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান তা নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬ মার্চ থেকে আমদানি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। সরবরাহে কোনো উত্তেজনা না থাকলেও ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। এমতাবস্থায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে- বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বারবার সতর্কবার্তাও কাজ করেনি। দেড় মাস আগে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ কমেছে ৮০ টাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে এই দামের কাছাকাছি ছিল।
দু-তিন দিন আগে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের কেজি শতকে পৌঁছেছে। এরপর গত রোববার বিকেলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এ খবর গণমাধ্যমে আসার পরই পেঁয়াজের বাজারে দরপতন শুরু হয়। ওই রাতেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে কমেছে ৫ টাকা।
গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজার ও শ্যাম বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কম। তবে খুচরা বাজারে দাম কমছে। পাইকারি বাজারের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম অনেক কম। ভারত থেকে এলে দেশি পেঁয়াজের দাম কমবে। এ কারণে সবাই যা আছে তা বিসর্জন দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ লাভবান হচ্ছে আবার কেউ লোকসান করছে। খুচরা পর্যায়ে তা দু-একদিনের মধ্যে আরও কমবে।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ব্যুরো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দাম কমেছে কেজিতে ৪০ টাকা। গত রোববার সন্ধ্যায় যে পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৮৮ থেকে ৯৫ টাকা কেজি, গতকালও একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। আমদানির খবরে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে ফোনে একশ মণ পেঁয়াজের দাম কমানো হচ্ছে। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। দাম কমানো নিয়ে এই বিশাল বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে।
খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বানিয়ালার মালিক চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, দেশি পেঁয়াজের উৎপত্তিস্থলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমদানির খবর আসছে, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দু-একদিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। তাই দেশি পেঁয়াজ যথাসম্ভব কম বিক্রি করুন। এ কারণে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকার বেশি দাম কমেছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, “পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে- দামে ব্যাপক পতন হয়েছে। প্রথম দফায় প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৭০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আরেক দফা কমানোর পর ৬০ টাকা পর্যন্ত দাম কমবে দুই-একদিনের মধ্যে।
এদিকে, কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে। প্রথম দিনে ২১০টি আইপি অনুমোদিত হয়েছিল। ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৩ ট্রাক পেঁয়াজের চালান ৭৫ টন আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঢাকার আমদানিকারক জারিফ ইন্টারন্যাশনাল এসব পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর প্ল্যান্ট কন্ট্রোল সেন্টারের উপ-পরিচালক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, আমদানি নির্দেশনা এসেছে। আইপি দেখানো হলে আমরা এখান থেকে উদ্ভিদ সুরক্ষা সার্টিফিকেট ইস্যু করব। রয়্যাল এন্টারপ্রাইজেস নামে একটি সিএন্ডএফ এজেন্ট ৭৫ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে।
দাম কমানোর বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, এর বড় প্রমাণ হলো অসাধু ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির অজুহাত ব্যবহার করে পেঁয়াজ আমদানি- হঠাৎ করে দাম কমানো। এর মাধ্যমে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কম দামে কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।