আবের জায়গায় কে আসছেন
জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও গরম হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হতে চলেছেন, তা নিয়েই এখন জল্পনা-কল্পনা। প্রধানমন্ত্রী হতে অনেকে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন।
দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল এলডিপি। আগামী বছর পর্যন্ত দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সুযোগ ছিল আবের। কিন্তু এক বছরের বেশি আগে অসুস্থতাজনিত কারণে সরে দাঁড়ালেন আবে। এলডিপি একক রাজনৈতিক দল হলেও এর ভেতরে উপদলীয় কোন্দল রয়েছে। এই কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের পালা ঘনিয়ে এলে। যে উপদলে সাংসদসংখ্যা বেশি, তাদের অবস্থান তত শক্তিশালী। দলীয় প্রধান নির্বাচনে দলের বিভিন্ন শাখা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেও সাংসদের ভোট হচ্ছে বেশি মূল্যবান। ফলে বিভিন্ন উপদল এখন একে অন্যের শক্তি যাচাই করে নিজ নিজ নির্বাচনী অবস্থান ঠিক করে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় যে কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে আলোচনায়, তাঁরা নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করতে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন।বিজ্ঞাপন
আবের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে অবশ্য কিছুটা ধোঁয়াশা আছে। মন্ত্রিসভায় আবের সবচেয়ে কাছের চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা ছিল। তবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে মতভেদে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। অনেকের মতে, আবে হয়তো পরবর্তী পছন্দ হিসেবে দলের মহাসচিব ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার দিকে ঝুঁকবেন। তবে কিশিদার সমস্যা, স্থানীয় পর্যায়ে বা দলীয় সাংসদদের মধ্যে বড় সমর্থন নেই। এ কারণে তোশিমিৎসু মোতেগিকে উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন দিতে পারেন আবে। কয়েক মাস আগে তারো কোনোকে সরিয়ে মোতেগিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানান আবে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সফল বাণিজ্য আলোচনার জন্য মোতেগি আবের সুনজরে।
তবে আবের প্রভাব বলয়ের বাইরের প্রার্থীদেরও হিসাবে রাখতে হচ্ছে। আবের দীর্ঘ শাসনামলে আর্থিক ও অন্যান্য কেলেঙ্কারিতে এলডিপি জড়িয়ে পড়ায় অনেক নেতা নিজেদের দূরে রেখেছিলেন। এখন তাঁরা তৎপর হচ্ছেন। এ ছাড়া উপদলীয় শক্তির দিক থেকেও আবের অবস্থানের চেয়ে শক্তিশালী নেতারা দলের পরবর্তী নেতা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আবের মন্ত্রিসভার উপপ্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো আসো।
বার্তা সংস্থা কিওদো নিউজের চালানো এক জরিপমতে, দলের ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ সদস্য বলেছেন, জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁদের পছন্দ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও দলের সাবেক মহাসচিব শিগেরু ইশিবা। এর আগে দলীয় সভাপতি নির্বাচনে আবের কাছে দুবার পরাজিত হন তিনি। নেতৃস্থানীয় প্রার্থীদের বাইরে আরও যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনো অন্যতম।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ব্যয়বহুল ভূমির ইজিস ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনের পরিকল্পনা বাতিল করেন তিনি। তবে ইশিবার মতো উপদলীয় অবস্থানের দিক থেকে ভালো অবস্থায় তিনি নেই। তাই উপদলীয় নেতাদের সঙ্গে তাঁরও আলোচনা প্রয়োজন রয়েছে।বিজ্ঞাপন
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন জাপানের পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি। তাঁর বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনইচিরো কোইজুমি। তিনি আবের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও যে দুজন নারীর নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেইকো নোদা ও টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে।