আবারও ভারতে পালিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ: গয়েশ্বর
এই সরকারকে হটানোই বিএনপির মূল লক্ষ্য মন্তব্য করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একবার ভারতে পালিয়েছে, আবারও পালাবে। দেশের মানুষ কিছু না বললেও পালিয়ে যাবে।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিএনপি খুন-হামলার রাজনীতি করে না মন্তব্য করে এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে একদিনে দুই লাখ মানুষ মারা যাবে।’ আমি বলছি, আওয়ামী লীগের একজনও নয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মরবে কারণ বিএনপি হত্যা ও হামলার রাজনীতি করে না, আমরা বিশ্বাস করি কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন সরকার জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ভর্তুকির নামে।” আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজরা তার সঙ্গে আছে। এসবের প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও। মানুষের কষ্ট কিসের!
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা ১৬ বছর ধরে কষ্ট করছেন, হয়তো আরও কিছু দিন কষ্ট পেতে হবে। এই আন্দোলনের সাফল্য মানে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন, বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন পুলিশ ও কিছু সংস্থা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে। এটা কি তাদের কাজ? তাদের কাজ গুম, সীমান্ত পার হওয়া আসামীদের সহযোগিতা করা নাকি? অবশ্যই না.’
আইনি জটিলতায় ভারতে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালে উত্তরা থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। বেনজীর আহমেদ ছিলেন মহাপরিচালক। এ সময় র্যাব মো. ভারতের হর্নে আবিষ্কৃত ঢাকার উত্তরা থেকে সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন মানুষকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করা।
কবি ফরহাদ মাজাহারকে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কবি ফরহাদ মাজাহার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাকে ঢাকা থেকে তুলে আনা হয়েছে। যারা তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং খুলনা থেকে ফিরিয়ে আনে তাদের চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। অর্থাৎ ফরহাদ মাজাহারকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মুক্তির পর ফরহাদ মাজাহার কথা বলেননি, নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। এর কারণ কী? তবে সব কিছু বলা যায় না, বোঝা যায়?’
বেনজিরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, দুদক তাকে অফিসে হাজির হতে চিঠি দিয়েছে।
বেনজিরের দেশ ছাড়ার খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশনে যারা আছে তারা কি অন্ধ না বোবা, নাকি তারা স্কুলে যায় না? সব পত্রিকায় বেনজিরের খবর ছাপা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “তিনি এমন পর্যায়ে চলে গেছেন যে তিনি সুস্থ না অসুস্থ তা বোঝা যাচ্ছে না। একজন চতুর মানুষ মনে করেন, নিজে ছাড়া কেউ কিছু বোঝে না; ওবায়দুল কাদেরও তাই মনে করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পুলিশ দিয়ে ক্ষমতায় রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, এখন পত্রিকা খুললে ভারতে নিহত সংসদ সদস্য বেনজির ও আনারের খবর দেখতে পাবেন।
সাংসদ আনারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমিও বলব- তিনি যদি সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিচারও জনসম্মুখে হওয়া উচিত। ভারতকেও খুঁজে বের করতে হবে কারা এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সরকারের লবণ আনতে পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, “দেশের অবস্থা ভালো না। সরকার একের পর এক ঘটনা সামনে আনে। এই শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘটনা ঘটিয়ে নাটক তৈরি করেন। আজিজ, বেনজির, আন্না মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে। আমরা এই নিয়েই ব্যস্ত, তখন কপালে হাত দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, দুদক এই বাচ্চুর একটি চুলও ছিঁড়তে পারেনি, কেন? তাকে কি গ্রেফতার করা যায় না?
সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল আলম মজনু, নবীউল্লাহ নবী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব প্রমুখ।