• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আবারও বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম।ডিম-মুরগি এখনো চড়া

    কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে এবং বাজারদর আরও এলোমেলো হয়ে গেছে। একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এবার আবারও বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। গত এক সপ্তাহে কেজিতে আটার দাম বেড়েছে ৫ টাকা এবং আটার দাম বেড়েছে ২ টাকা থেকে ৫ টাকা। তবে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও একই দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস।

    শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নাখালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও খোলা আটার দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে খোলা আটা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, প্যাকেটজাত আটার দাম না বাড়লেও নতুন দামে আটার দাম কমবে। শীঘ্রই বাজারে উপলব্ধ। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে।

    সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজারদর প্রতিবেদনেও দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে আলগা আটার দাম কেজিতে ২৮ শতাংশ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আর খোলা আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম প্রায় ১ শতাংশ।

    খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে একে একে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। ফলে আটাসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়নকে দায়ী করছে ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

    কারওয়ান বাজার আব্দুর রব দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. নাঈম বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ার পরই পাইকারি পর্যায়ে আটার বস্তা বেড়েছে ১০০ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দামও বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় দেশে বাড়ছে আটার দাম; এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

    কানাডা ছাড়াও বাংলাদেশের গমের প্রধান উৎস রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত এপ্রিল থেকে বিশ্ব গমের বাজারে অস্থিতিশীলতা শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশে গম আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশে গমের দাম বাড়তে থাকে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতির কিছুটা প্রতিকার হয়েছে। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের বিপদ বাড়ে। এরপর থেকে ময়দার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি এ দুটি পণ্য থেকে তৈরি সব প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে।

    তবে সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থায়ও খাদ্যশস্য রপ্তানির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ একটি চুক্তি সই করেছে। চুক্তির পর ইউক্রেন গম রপ্তানি শুরু করে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, ২৫টি শস্য জাহাজ ইউক্রেন ছেড়ে গেছে। তবে দেশ থেকে এখনো বাংলাদেশে কোনো গম আসেনি।

    এদিকে সরকারি গুদামেও গমের মজুদ কমেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ লাখ ৪৮ হাজার টন গম মজুদ রয়েছে।

    কয়েকদিন ধরেই ডিম ও ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে অস্বাভাবিক দামে। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির ফলে বিক্রি কমে যায় এবং জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থার দ্বারা খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অভিযান চালানো হয়। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুরের শাহআলী মার্কেটে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়; যা বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। তবে পাড়ার দোকানগুলোতে এখনো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়।

    এদিকে রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী মার্কেটের ডিমে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ডিম ক্রয়ের ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা, সেল ক্যাশ মেমোর কার্বন কপি ছিঁড়ে ফেলা, কার্বন কপিতে দাম না লেখা, মূল্য তালিকা না আঁকাসহ বিভিন্ন অপরাধে হালাল এগস ও মুনির ডিমকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অর্গানিক সিল দিয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করেও জৈব ডিমের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় ভাই ভাই আড়ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    মন্তব্য করুন