• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আবারও বিস্ফোরণ, মৃত্যু কান্না।মনিটরিং এজেন্সিগুলো দায়িত্ব নেয় না

    পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডি ২০১০ সালের ৩ জুন ভোলার নয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। চকবাজারের চুড়িধাট্টায় ২০১৯ সালের ওয়াহিদ ম্যানশন ট্র্যাজেডি ৭১ জন তাজা প্রাণ দিয়েছে। এর আগে এবং পরে আরও অনেক নৃশংস দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সতর্ক নয়। তারা দায়িত্ব নিতে চায় না। গ্রাহকরাও সচেতন ছিলেন না। ফলে থামছে না অকাল মৃত্যু।

    কোথাও রাসায়নিক গোডাউনে আগুন বা কখনও গ্যাস বিস্ফোরণ। একের পর এক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। সর্বশেষ ট্র্যাজেডি সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডে পৌরসভা ভবন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মর্মান্তিক ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। কিন্তু বারবার ঘটে যাওয়া এসব মর্মান্তিক ঘটনার দায় নিতে নারাজ সরকারি সংস্থাগুলো। প্রতিটি মামলায় এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি থাকলেও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখছে না। বিভিন্ন সময়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করে না কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদারকি সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণে পুরো ঢাকা আগুনে পরিণত হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আগুনে পুড়ে জীবনযাপন করছে।

    নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, নিমতলী-চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এর মধ্যে প্রধান সুপারিশ ছিল রাসায়নিক ব্যবসা সম্বলিত ভবন ও গোডাউন স্থানান্তর করতে হবে। আর ভবনগুলো ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের ওপর কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। এরপর রাসায়নিক গুদামটি সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে যা হয় তাই হয়।

    স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, ঝুঁকিমুক্ত, নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য শহর নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। ভবনের নকশা অনুমোদন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একইভাবে ওয়াসা, তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগও পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন দিয়ে দায় মেটাচ্ছে। তারা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং দায়িত্বশীল সংস্থা দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয় না. দুর্ঘটনা ঘটলেও কাউকে আইনের আওতায় আনার নজির নেই। ফলে বারবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

    রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ভবনের নকশায় কেউ গোলমাল করলে রাজউক দেখে। আর ভবনটি জরাজীর্ণ হলে তার দায় সিটি করপোরেশনের। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ বা গ্যাসের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়। আর বিস্ফোরক সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি করার কথা বিস্ফোরক পরিদর্শকের। সিদ্দিকবাজার ভবনে নকশার কোনো ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটেনি।

    ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওই এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ বলেন, একটি ভবনে বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। গ্যাস লাইন আছে। প্রতিটি বিল্ডিংয়ে কমবেশি এসি ব্যবহার করা হয়। এগুলো মনিটরিংয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়ে না। বরং কখনো এমন সমস্যা দেখলে আমরা তিতাস-ওয়াসা-বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেই। সিদ্দিকবাজার ভবনের সামনের একটি লেন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমরা একটি গলি বন্ধ করে দিয়েছি।

    সিদ্দিকবাজার ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্যাসের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি দাবি করে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন্স) প্রকৌশলী সেলিম মিয়া মঙ্গলবার খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করেন। ডিটেক্টর দিয়ে চেক করে গ্যাসের উপস্থিতি ধরা পড়েনি। একটি রাইজার পাওয়া গেছে, অক্ষত। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হলে আগুন লেগে যেত। সিদ্দিকবাজার ভবনে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

    তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই তারা একটি কমিটি গঠন করেন। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে যেহেতু একটি ভবনের গ্যাস সংযোগ (রাইজার) দেওয়া হয়, সেহেতু অভ্যন্তরীণ লাইন, চুলা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রাহকের। যখন তারা কোন ত্রুটি রিপোর্ট করে, তিতাসের দল গিয়ে তা পরীক্ষা করে। ওই বিল্ডিং থেকে কেউ কখনো এমন সমস্যার কথা জানায়নি। এ ছাড়া তিতাস নিজ উদ্যোগে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকার বিতরণ লাইন পরীক্ষা করেন। ত্রুটির উপর লাইন থামায় বা প্রতিস্থাপন করে।

    ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসির পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে বৈদ্যুতিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটেনি। আর যে কোনো ভবনের বৈদ্যুতিক তার লাগানো এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রাহকের। যদি কোনও গ্রাহক মিটার বা সংযোগে ত্রুটির রিপোর্ট করেন, ইলেকট্রিশিয়ান গিয়ে তা পরীক্ষা করে।

    সম্প্রতি ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিনতলা বাণিজ্যিক ভবনে বড় ধরনের বিস্ফোরণ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি অক্সিজেন কারখানায় বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ার পর ভবন তদারকির বিষয়টি সামনে এসেছে।

    মন্তব্য করুন