আবারও বাড়বে জীবনযাত্রার খরচ
চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে; সে তার জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে চিন্তিত। এরই মধ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক কর বাড়িয়েছে সরকার। এতে বছরের শুরুতে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও এক ধাপ বেড়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শুল্ক বৃদ্ধি সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ দুটি হলো- মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং আবগারি ও লবণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ। এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে। ফলে এসব অধ্যাদেশের পরিবর্তন অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব পাস হয় এনবিআরের।
এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। জাতীয় সংসদ না থাকায় একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুল্ক ও কর বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনারারি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত খুবই কম। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা সবই ঋণ নির্ভর, এবং ঋণের চাপও বাড়ছে। এগুলো অর্থনীতিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। অন্যদিকে, চাপও রয়েছে যে আমরা এখনও আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারিনি।
এমন বাস্তবতায় রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তামাক ও অ্যালকোহলের মতো ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো যৌক্তিক; কিন্তু পোশাক ও রেস্তোরাঁ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর বৃদ্ধি নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তারা ইতিমধ্যেই সামগ্রিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে। আমি মনে করি, আগামী বাজেটে প্রত্যক্ষ কর কীভাবে বাড়ানো যায় তার ওপর আরও জোর দেওয়া উচিত। আমাদের পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, যা সাধারণ মানুষের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করে। এ জন্য করের ভিত্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের ওপর আরও জোর দিতে হবে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তর ও বিভিন্ন হারের পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে একটি হার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে এটি কিছুটা কমিয়ে সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের সিম বা র্যাম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিনের মোবাইল ফোন কল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে।
রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে। কারণ সব ধরনের রেস্টুরেন্টের বিলের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন এই হার ছিল ৫ শতাংশ। শহুরে মধ্যবিত্তরা তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলে এখন বেশি খরচ হবে। এছাড়া উৎসব বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিষ্টি কেনার খরচও বাড়তে পারে। কারণ মিষ্টির দোকানে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
পোশাকের আউটলেট বিলের উপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এখন ব্র্যান্ডের দোকান বা মার্কেট থেকে তৈরি পোশাক কিনলে বেশি দাম দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ভ্যাট ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এতে কাপড়ের দাম বাড়বে। এটি বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ দাম বাড়লে বিক্রি কমতে পারে।
আমদানি করা ফলের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ফল। এর মধ্যে রয়েছে আঙ্গুর, আপেল, আম, কমলা এবং নাশপাতি। এছাড়াও রয়েছে ফলের রস। এছাড়াও, তামাক, রং, মদের বিল, আলুর ফ্লেক্স, প্লাস্টিক ও ধাতব চশমার ফ্রেম, পড়ার চশমা, সানগ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং সেগুলিতে ব্যবহৃত তেল, সিআর কয়েল ইত্যাদি সহ বেশ কিছু পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের টিস্যুতে ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট দ্বিগুণ করলে টিস্যুর দাম বাড়তে পারে।
টেইলারিং শপ ও টেইলার্সের ওপর ভ্যাটের হারও ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টেইলারিং দোকানে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
এদিকে ভ্রমণে আগ্রহী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ভ্রমণ ব্যয় বাড়ছে। কারণ নন-এসি হোটেলে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্কও বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং সার্কের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে।
Do Follow: greenbanglaonline24