আবারও টাকা সংগ্রহের ভূমিকায় বিএবি।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস’ (বিএবি) এর চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচির নামে ব্যাংক থেকে অনুদান সংগ্রহ করে সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা দিতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নামে পরপর দুটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের নামে ব্যাংকগুলোকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করেন তিনি। ছাত্র-জনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএবির নেতৃত্বে পরিবর্তন হলেও অর্থ আদায়ের পুরনো নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের এই সংগঠন আবারও টাকা আদায়ে ভূমিকা নিয়েছে।
জানা গেছে, এবার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহায়তা করতে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় চার কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য অনুযায়ী টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএবি সম্প্রতি ৪১টি ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের চিঠি পাঠিয়েছে যত দ্রুত সম্ভব টাকা জমা দিতে। তবে আগের মতো টাকা আদায়ের এমন উদ্যোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিএবির নতুন চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকারের কাছে একটি আবেদন পাঠানো হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা দিতে ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয় বিএবি। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে অনুদানের পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ভালো পারফরম্যান্স সম্পন্ন ব্যাংকগুলোকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দিতে বলা হয়েছে। যাদের গড় পারফরম্যান্স আছে তাদের ১০ লাখ টাকা এবং যারা পিছিয়ে আছে তাদের ৫ লাখ টাকা দান করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএবি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস পাঠানো হয়; কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
এ প্রসঙ্গে বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে ম্যারাথন হচ্ছে। এমন একটি সংগঠনে আমাদের অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা সামগ্রিকভাবে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছি তা খুব বেশি নয়। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কাউকে এই টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে না। আমরা শুধু বিএবি থেকে অনুরোধ করেছি।
তবে আগের মতো জোর করে চাঁদা আদায়ের এমন উদ্যোগের সমালোচনা শুরু হয়েছে বাঁকপাড়ায়। বিএবির এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা বলেন, বিএবির আগে যেসব কার্যক্রমের সমালোচনা করা হয়েছিল সেগুলো আবার শুরু হয়েছে। সহায়তার নামে জনগণকে টাকা দিতে বাধ্য করার এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
যাইহোক, গত দেড় দশকে, সিএসআর ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল’কে কেন্দ্র করে। কারণ সে সময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম মজুমদার ছিলেন বিএবির চেয়ারম্যান।
তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চাঁদা দেওয়ার নামে ব্যাংক থেকে লাগামহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের যে কোনো অনুষ্ঠানে বা দুর্ঘটনায় গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করতে বাধ্য করতেন।
এভাবে প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শত শত কোটি টাকা জমা হয়। এ ছাড়া শেখ হাসিনার নামে দুটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের নামে ব্যাংক থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা আদায় করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান তার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হলেও ভয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নজরুল ইসলাম মজুমদারকে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। ফলে বিএবির চেয়ারম্যান পদও হারান তিনি।
Do Follow: greenbanglaonline24