• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আবারও ওয়াসার ‘অনলাইন এমডি’ তাকসিম

    ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। আবারও তিনি নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করেছেন। তাকসিম এ খান গত বুধবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশও জারি করেন। আদেশে বলা হয়েছে, তিনি ছয় সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালন করবেন।

    এর আগে গত বছরের এপ্রিলে অনলাইনে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন তিনি। সমালোচনা না কমলেও গত জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের কাছে আবারও একই অনুরোধ করেন তিনি। তবে এবার অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড। প্রয়োজনে তাকে ছুটি দেওয়া হবে। অবশেষে বোর্ডের সিদ্ধান্ত না মেনে গত বুধবার তিনি নিজেই অফিস আদেশ জারি করেন।

    ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা  বলেন, ‘আমি জানি না তিনি কীভাবে করেছেন। আমি এরকম কোন অফিস আদেশ সম্পর্কে অবগত নই। তবে এর আগে বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয় তিনি আর অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। প্রয়োজনে তাকে ছুটি দেওয়া হবে। এ জন্য তার ছুটিও মঞ্জুর করা হয়েছে।’

    তবে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দ্বীপ আজাদ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ স্ববিরোধী। বোর্ডের সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একদিকে বলছেন তিনি ছুটিতে থাকবেন, অন্যদিকে বলছেন এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। তার আবেদন ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে বোর্ড। অতঃপর এ কাজ করে সে কাজটি করে ফেলেছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বোর্ড মিটিং আছে। বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে।

    জানা যায়, ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ও চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তাকসিম এ খান। এ সময় ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তাকসিম এ খান তা উপেক্ষা করে নিজেই আলাদা অফিস আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস ডিউটি ​​করবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল, আইএমও, ভাইবারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে কোনো কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। এরপর টানা তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সে সময় ঢাকা ওয়াসার এমডির নামের সঙ্গে ‘অনলাইন এমডি’ উপাধি জুড়ে দেওয়া হয়।

    গত জুলাই মাসে, তিনি ১০ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর, ২০২২ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য ছুটির আবেদন করেছিলেন। তিনি আবার অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে গত ৭ জুলাই ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ১০-১১ ঘণ্টা। বাংলাদেশে যখন দুপুর, যুক্তরাষ্ট্রে তখন মধ্যরাত। এ ছাড়া আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। শারীরিক অবস্থান ছাড়া এমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে তাকে পূর্ণ ছুটি দেওয়া হবে। এরপর বোর্ড তাকসিম এ খানের ১০ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর, ২০২২ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ছুটি অনুমোদন করে। কিন্তু তিনি সেই ছুটি কাটাননি।

    এ ব্যাপারে প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে মেসেজের উত্তরও দেয়নি।

    এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার মুখপাত্র মোস্তফা তারেক  বলেন, ‘সরকারের দুটি জিনিস আছে। ব্যবসার নিয়ম এবং পদ্ধতির নিয়ম। ওয়াসার সকল কার্যক্রম এ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। ফলে এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

    এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসায় স্বৈরাচার কায়েম করেছেন তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি এমন একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি যে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রণালয়ও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার অধিকার তার নেই। এখন দেখার পালা বোর্ড কী ব্যবস্থা নেয়।

    মন্তব্য করুন