• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আন্দোলনের মুখে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে

    অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। শুরুতে পতিত সরকারের শীর্ষ পদে বসানো ব্যক্তিকে ঘিরে আন্দোলন শুরু করেন দীর্ঘদিনের বঞ্চিত চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের মুখে একাধিকবার মহাপরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল হয়েছে। এখন এই খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য চায় বিএনপিপন্থী মেডিকেল অফিসাররা। রিক্রুটরা তাদের পছন্দের না হলে ফ্যাসিবাদের নাম সংযুক্ত করা হয়। এমন চেয়ার টানার কারণে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। লাগাতার আন্দোলনের কারণে কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা দায়িত্ব নিতে পারছেন না।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন অচলাবস্থার কারণে এ খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার অপারেশন প্ল্যান (ওপি) অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত জুনে এটি অনুমোদনের কথা থাকলেও হয়নি। এই বছর টিকা, কৃমিনাশক, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের মতো জাতীয় কর্মসূচি হবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবু জাফর গতকাল রোববার রাতে বলেন, আমি মাত্র তিন দিন দায়িত্বে আছি। OP এর প্রায় সব কাজ বন্ধ। এ বছর আদৌ অনুমোদন হবে কিনা তা অনিশ্চিত। এই অচলাবস্থা কাটতে কিছুটা সময় লাগবে। মহাপরিচালক চাইলেই সব করতে পারেন না, মন্ত্রণালয়েরও এখানে অনেক কিছু করার আছে।

    গত ১৫ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উচ্চপদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বঞ্চিত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; যা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। গতকাল সকালেও মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনের ব্যানারে নির্যাতিত ও বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। এর নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ড্যাব)। আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালক (প্রশাসন), হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লাইন ডিরেক্টর, এমএনসিএইচের লাইন ডিরেক্টর এবং অন্যান্য পরিচালকদের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

    ড্যাবের চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, তারা চান সরকারের সদিচ্ছা ফুটে উঠুক। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণের হুমকি দেওয়া হয়। তারা বলেন, আওয়ামী সরকার সমর্থকদের সুবিধা দিতে বা সুযোগ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

    ড্যাব নেতা নিটোরের চিকিৎসক খায়রুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “ডাক্তাররা স্বাস্থ্য খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ড্যাব চিকিৎসকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। এ ছাড়া এসব কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না।

    ড্যাবের ডিজি শাখার মহাসচিব মো. আরেফিন রঞ্জু বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময়ে বঞ্চনার শিকার হয়েছি। আওয়ামী লীগ আমলে যারা নানা সুবিধা নিয়েছে তারাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছে। যারা সুবিধা নিয়েছে, শান্তি সমাবেশে গেছে তারা সবাই ফ্যাসিবাদের বন্ধু। তারা। চলমান আন্দোলনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পতনের জন্য আপনি দায়ী নন এমন প্রশ্নের জবাবে রঞ্জু বলেন, আমরা চাই না স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হোক আমরা না, উপদেষ্টা এর জন্য দায়ী।

    গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত না থাকায় অধস্তনরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার অফিসের কাজ করতে পারলেও গতকাল অধিদপ্তরে আসতে পারেননি নতুন মহাপরিচালক। আবু জাফর। দুপুর ২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ। তবে আন্দোলনের কারণে তিনি অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। সরকারি গাড়িতে এলেও সিএনজি করে ফিরে যেতে হতো।

    আবু হানিফ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি যেসব কর্মস্থলে কাজ করেছি সেগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। প্রশাসনের চেয়ারদের তাদের দায়িত্ব পালনের সময় অনেক কিছুর সাথে সমন্বয় করতে হয় এবং কাজ করতে হয়। সেগুলোকে এখন রেফারেন্স হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। এই অভিযোগগুলো আমাদের বিশ্বাসের সাথে যায় না।

    আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হানিফ বলেন, এসব কথা আমি এভাবে বলব না। যে পদে আমি এক মাস যাবৎ দায়িত্ব পালন করছি। সবার কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি। তাই এখানে আমরা কাউকে আলাদা করতে রাজি নই। তারা (ড্যাব) তাদের অবস্থান থেকে কথা বলেছেন। আশা করছি, তাদের অবস্থানও স্পষ্ট হবে।

    নবনিযুক্ত হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের লাইন ডিরেক্টর জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, “আমি সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের মিটিং বা মিছিলে যাইনি। আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে।”