দেশজুড়ে

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নোয়াখালী রণক্ষেত্রে পরিণত, ৬০ জন আহত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নদনা বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে কমপক্ষে ৫০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০-৬০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার নদনা ইউনিয়নের নদনা বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের পর আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আতঙ্কের কারণে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। আজ সকালে স্থানীয়রা জানান, নদনা ইউনিয়নের উত্তর শাক্তলা ও দক্ষিণ শাক্তলা গ্রামের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে দুই গ্রামের মানুষ দ্বিধাবিভক্ত। বর্তমানে এ সংক্রান্ত চারটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, ৫ ডিসেম্বর নদনা বাজারে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে চেয়ার নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে তর্ক হয়। ফলস্বরূপ, সেদিন সংঘর্ষ শুরু হয়। পরের দিন, ৬ ডিসেম্বর সকালে উত্তর শাক্তলার হৃদয় নামে এক যুবককে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়।
৮ ডিসেম্বর রাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেদিন দক্ষিণ শাক্তলার পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিনের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রিপনের সেলুন, বাবুলের ফলের দোকান এবং জহিরের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। এর ধারাবাহিকতায়, গতকাল রাতে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১০টার দিকে নদনা বাজারে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে একের পর এক দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলির মধ্যে রয়েছে পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিনের ওষুধের দোকান, জামালের প্রসাধনী দোকান, মহারাজের ফাস্ট ফুড, সুমন ইলেকট্রনিক্স, জামাল ও মহিনের মোবাইল দোকান, তাহেরের কাপড়ের দোকান, আনোয়ারের মুদি দোকান, ফিরোজের ওয়ার্কশপ, মহিন পাটোয়ারী মুদি দোকান, মা ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকম এবং ফোরকান সু স্টোর সহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দোকানের মালামাল লুটপাটের পাশাপাশি কয়েকটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ধারণা, এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকায় টহল জোরদার করে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মহিন ও বাবুল অভিযোগ করেন, “দীর্ঘদিন ধরেই দুই পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন নিরীহ ব্যবসায়ীদের দোকান পুড়িয়ে লুট করা হয়েছে। আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, সংঘর্ষের সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা দাবি করেছেন যে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এ বিষয়ে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে।’ এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি পরিস্থিতির উপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, ক্ষতিপূরণ এবং স্থায়ী শান্তির দাবি জানিয়েছেন।