• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আট বছরেই বেনজিরের সম্পদ বেড়েছে

    এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পদ কেনা শুরু করেন বেনজীর আহমেদ। এ সময় তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সাড়ে চার বছর র‌্যাবের নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর প্রায় আড়াই বছর তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্বে ছিলেন। এই আট বছরে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব সম্পত্তির বেশির ভাগই তার স্ত্রীর নামে করা একাধিক কোম্পানির চেয়ারম্যানের নামে দলিল করা হয়েছে।

    অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজির ও তার পরিবারের নামে ২৫টি কোম্পানিতে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কোম্পানি ১০০% তার পরিবারের সদস্যদের নামে এবং কিছু আংশিক বিনিয়োগ।

    ২০১৪ সালে বেনজির নিজের নামে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আড়াই একর জমি কিনেছিলেন। ২০১৭ সালে স্ত্রী জিশান মির্জা ও তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজির, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজির ও জারা জেরিন বিনতে বেনজির পর্যটন জেলা কক্সবাজারে ইনানী সমুদ্র সৈকতের নামে জমি কিনেছিলেন। কিন্তু তার আগে ২০০৯ সালে ইনানী সমুদ্রতীরে বেনজিরের স্ত্রীর নামে প্রথম ৪০ শতাংশ জমি ক্রয়ের রেকর্ড পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, বেনজীর আহমেদ অবসর নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে রাজধানীর গুলশানে একদিনে ৯ হাজার ১৯৩ বর্গফুটের ৪টি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

    ৩১শে মার্চ ও ৩ এপ্রিল গণমাধ্যমে বেনজিরের বিপুল সম্পদের খবর প্রকাশিত হয়। এই

    সাবেক আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ১৮ এপ্রিল তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

    এই তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক দেখতে পায়, বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জিশান মির্জা ও তিন মেয়ের নামে ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ সেন্ট), ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের ১৯৬টি দলিল রয়েছে। এরপর ২৩ ও ২৬ মে এসব সম্পদ জব্দ ও ব্লকের নির্দেশ দেন আদালত।

    আদালতের নথি অনুযায়ী, বেনজির তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিনটি উপজেলায় তার সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদরে ৬৫টি দলিল করে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলের ৪৭ শতাংশ ও কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া মাদারীপুর জেলার রাজাইরে ২০২১ ও ২০২২ সালে স্ত্রী জিশান মির্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়।

    সম্পদ ক্রয়ের কোনো পূর্বানুমতি নেই: সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী বা তার পরিবারের সদস্যদের আড়াই লাখ টাকার বেশি মূল্যের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদ কোনো পূর্বানুমতি নিয়েছিলেন কি না, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কেউই বলতে পারেননি।

    ১০ কোটি টাকা উত্তোলনের তথ্য পেয়েছে দুদক : এদিকে সম্পদ জব্দের আগে বেনজির বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের সঙ্গে জড়িত দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে মাসখানেক আগে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তার সম্পদের নানা তথ্য আসতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন বলে তথ্য আসে। অনুসন্ধান করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। অনুসন্ধান দল তখন তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। জব্দের আগে বেনজীর আহমেদ ১০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

    তদন্ত চলছে: দুদকের ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ হলেই জানা যাবে মোট সম্পদের পরিমাণ কত। কমিশনের পক্ষ থেকে দেশের অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন সরকারি দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার জবাব পেলে তার আরও সম্পদ আছে কি না, তা জানা যাবে।

    এদিকে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

    এদিকে বেনজীর আহমেদ সপরিবারে দেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। দুদকের একটি সূত্র জানায়, তিনি দেশেই আছেন। কিন্তু কারো সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। আপাতত তাকে গ্রেপ্তারের কোনো পরিকল্পনা দুদকের নেই বলে জানা গেছে। তবে কিছু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মে মাসের শুরুতে সপরিবারে দুবাই পালিয়ে যান বেনজির। এই তথ্যের সমর্থনে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি।

    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেনজীর আহমেদের বিদায়ের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।