আজ ঢাকায় আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান
ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দীন ওয়াদ্দাউল্লাহ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন। দুই দিনের সফরে শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। সুলতানের সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশ পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তুতি নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সুলতানের সফর তিন দিন ধরে চলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। ১৫ ও ১৬ অক্টোবর সুলতানের রাষ্ট্রীয় সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি ব্রুনাই রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশে সফর। ২০২০সালের এপ্রিলে এই সফরটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল কিন্তু করোনার কারণে শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশে সুলতানের প্রতিনিধি দলে রাজপরিবারের সদস্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন।
সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দীন ওয়াদ্দাউল্লাহ আজ দুপুর আড়াইটায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন। ২১ বার করতালি দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে সুলতানকে। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সুলতান। সাভার থেকে তিনি ঢাকার হোটেলে উঠবেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুলতানের সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে যাবেন এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যাবেন সুলতান। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সুলতান তার সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার বিকেলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন সুলতান। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ব্রুনাইয়ের সুলতান একান্ত বৈঠক করবেন। দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের স্টেকহোল্ডাররা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সেখান থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে যাবেন সুলতান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বিমান চলাচল চুক্তি, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং নাবিকদের সনদপত্রের স্বীকৃতি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দেশগুলো স্বাক্ষরিত হতে পারে। এগুলো ছাড়াও ব্রুনাই থেকে জ্বালানি ক্রয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ে সমঝোতা স্মারক নবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি সংকটে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বাজারের বাইরে বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ব্রুনাই এরই মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি করবে দুই দেশ। এর আগে, বাংলাদেশ এবং ব্রুনাই এপ্রিল ২০১৯সালে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হয়েছিল। এই চুক্তিটি আবার নবায়ন করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন যে ব্রুনাই তার ২০৩৫রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চায়, যার মাধ্যমে তারা তার মেগা প্রকল্পগুলি সম্পন্ন করতে পারে। তবে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে একমত হয়েছে। বর্তমানে দেশে চিকিৎসক ও নার্সের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেখানে পেশাদার রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে দেশে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। ফলে অন্য দেশে ট্রানজিট করে সেখানে যেতে হয়। দুই দেশ সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলে এ ক্ষেত্রে শ্রমিক রপ্তানির খরচ কমে আসবে। ফলে এই সফরে শ্রম রপ্তানি, সরাসরি ফ্লাইট ও জ্বালানি ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৯ সালে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুলতানের আমন্ত্রণে ব্রুনাই সফর করেছিলেন। ওই সফরে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮৪ সালে ব্রুনাইয়ের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।