জাতীয়

আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের গোড়া কর্তনের নামান্তর: মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সারাদেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট এবং স্থানীয় কিছু সংসদ সদস্যদের সমর্থনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত ছিন্ন করার নামান্তর। ইউপি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একাধিক সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তাও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ইসির অনুরোধ ও নির্দেশনা উপেক্ষা করে আইন লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল থেকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্যরা সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছেন। চিঠি দেওয়া ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ সেই চিঠি উপেক্ষা করেছেন। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ অনিবার্য ছিল। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কার না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সামান্য জরিমানা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগ অসম্ভব। ‘ সারাদেশে পাঁচ দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘর্ষে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ব্যালট বাক্স ছিনতাই, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মারধর, ভোটকেন্দ্র দখল ও ভোটকেন্দ্রে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনার আলোকে মাহবুব তালুকদার বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ মনে হচ্ছে। এখন নির্বাচনী যুদ্ধে যুদ্ধ, ভোট নেই। ইউপি নির্বাচন এখন শোকের সুর বাজছে। কিন্তু নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।” “নির্বাচনী সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার জন্য, আইন প্রয়োগকারীকে তাদের প্রতিক্রিয়া জোরদার করতে হবে,” তিনি বলেছেন। সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে মুক্তির পথ বের করা অপরিহার্য। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রথা বাতিল না হলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। ” দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনতাই প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের মূল শর্ত হলো নির্বাচনের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা। আমরা তা সঠিকভাবে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর দায় এড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। যে কোনো মূল্যে ব্যালট পেপারের সুরক্ষা দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপার বিবিসি প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা প্রশ্ন তুলছি যে নির্বাচন কমিশন সেদিন রাতে ভোটগ্রহণ করেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। ‘ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, “মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ভোটের অধিকার থেকেই মানবাধিকারের উদ্ভব। এটাই আমাদের সংবিধানের চেতনা। প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা। জনগণের ভোটের অধিকার এখনো অনেক দূরে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একই মুদ্রার বিপরীত দিকে। শুধুমাত্র ভেজালহীন গণতন্ত্রই মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।

মন্তব্য করুন