আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি
চিনির কেজিতে তিন টাকা কমানোর ঘোষণার চার দিন পরও বাজারে চিনির নতুন দাম দেখা যায়নি। ফলে প্রতি কেজি এখনও বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। কিছু কিছু জায়গায় চিনির সরবরাহও কম। তবে তিন দফা চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণার দিনই নতুন দরে চিনি বিক্রি হয়।
ক্রেতারা বলছেন, প্রতি কেজি চিনি মাত্র তিন টাকা কমানোর ঘোষণা ভোক্তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন। এর আগে কয়েক দফা দাম বাড়িয়েও নির্ধারিত দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামে কিনতে হয়। এখন সামান্য দাম কমানোর ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে।
চিনি আমদানিকারকরা বলছেন, আগের দাম বাড়ায় এখনো বাজারে প্রচুর চিনি রয়েছে। সেগুলো বিক্রি হচ্ছে। রোববার থেকে কম দামে চিনির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। যা চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ বাজারে আসতে পারে।
এর আগে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর পর আমদানিকারকরা জানান, শুল্ক কমানোর আগে যে চিনি আমদানি করা হতো, তা বিক্রি করা হয়নি। তাদের গুদামে এখনও প্রচুর চিনি অবশিষ্ট রয়েছে।
ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে চিনির দাম মোট চারবার বাড়ানো হয়েছিল। ফলে খোলা চিনির কেজি ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি দাঁড়িয়েছে ১১২ টাকায়। তবে বাজারে চিনির অস্থিরতা শেষ হয়নি।
এরপর আমদানিকারকরা সরকারকে চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর অনুরোধ করেন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে। একই সঙ্গে প্রতি টন আমদানি শুল্ক ৩ হাজার টাকা করে। অপরিশোধিত চিনি ও পরিশোধিত চিনির ওপর ৬ হাজার টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩০ মে পর্যন্ত শুল্ক মওকুফের এ সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারক ও বিপণনকারীদের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক সুবিধার আওতায় চিনি আমদানি করা হলে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৫ টাকা কমতে পারে। অব্যাহতি কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি তিন টাকা নতুন দর ঘোষণা করেছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে আলগা চিনি ১০৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১০৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। কিন্তু রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে এ দামে চিনি পাওয়া যায়নি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের মতোই পরিশোধিত সাদা খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা, প্যাকেট চিনি ১১২ থেকে ১২০ টাকা এবং দেশীয় হালকা লাল চিনি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের রান্নাঘর বাজার থেকে এক কেজি লাল চিনি দেড়শ টাকায় কেনার পর। জাকারিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, প্যাকেটের গায়ে ১১২ টাকা লেখা দেখুন। কিন্তু দেড়শ টাকায় কিনলাম। এটা দেশের ব্যবসায়ীদের ছিনতাইয়ের ব্যবসা। দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। টাকা।এটা মানুষের সাথে এক ধরনের প্রহসন।আজকের যুগে ফকিরও পাঁচ টাকার কম দিলে ভিক্ষা নিতে চায় না।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। পাইকারিতে না কমলে খুচরা বাজারে দাম কমার কোনো সুযোগ নেই। মালিবাগ কাঁচাবাজারের মা দোয়ার দোকানের বিক্রেতা আল-আমিন সরকার বলেন, এখনও তাদের আলগা চিনি ১১০ টাকায় এবং প্যাকেট চিনি ১১২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। তাই ১২০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না।
এদিকে কারওয়ান বাজারের রতন স্টোরের মালিক রতন জানান, বাজারে এখনো চিনির সরবরাহ বাড়েনি। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো যদি এখনো এক ব্যাগ চিনি চায়, তাহলে তারা তাদের সঙ্গে এক প্যাকেট দুধ বা হালিম মিশ্রিত বা এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনতে বাধ্য করে। তারা বিক্রির রসিদও দেয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই দামেই বিক্রি করা হবে। এই চিনি সম্ভবত সপ্তাহের শেষের দিকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।