আগামীকাল ঈদ: মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে ব্যস্ত মেঘনাপাড়ের মানুষ
চলতি বর্ষায় মেঘনার ভাঙনে এক একর জমির ওপর নির্মিত বাড়ি হারিয়েছেন আইয়ুব নবী। এর আগেও নদীগর্ভে কয়েক একর জমি হারিয়েছেন তিনি। তবে এবার দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কমলনগরের পাতারিহাটের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি উপজেলার খয়েরহাট এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তিনি নতুন নতুন বাড়ি তৈরি করছেন।
চলতি মৌসুমে মেঘনার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কমলনগর ও পার্শ্ববর্তী রামগতির আট গ্রামের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনগরে গড়ে ৮-১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মেঘনার ভাঙন রোধে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করে। এতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু এর কাজ পুরোদমে শুরু না হওয়ায় দুই উপজেলার ২৫ হাজার মানুষ এখন হতাশায় ভুগছেন।
কমলনগরের চর কালকিনি, চরজগবন্ধু, চর ফলকন ও পাতারীরহাট এবং রামগতির বালুরচর, জনতা বাজার, মুন্সিপাড়া ও চর আলগী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা উত্তাল হয়ে উঠেছে। দুই সপ্তাহে অনেকেই বাড়িঘর ও জমি হারিয়েছেন। বাদ যাচ্ছে না হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। দেশের অন্যত্র কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলে মেঘনাপাড়ের মানুষ লুকানোর জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে ঈদের কোনো উৎসাহ নেই।
গত বুধবার ভাঙনের মুখে থাকা বাড়ির দরজা-জানালা সরিয়ে ফেলতে দেখা গেছে অনেককে। এক টুকরো জমির খোঁজে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুই যুগে মেঘনায় প্রায় ১০ একর ফসলি জমি হারিয়েছে চরফলকান ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন তিন একরের বাড়িও ভাঙার মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা বাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।
চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাঘা বলেন, তার ইউনিয়নের অন্তত ২০টি পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে দুই মাস পর। তিনিসহ ধসের ঝুঁকিতে থাকা শত শত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। মাথাগোজার জায়গা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ায় ঈদ নিয়ে খুশি নন তারা। ভাঙন রোধে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (কমলনগর অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম বলেন, দুই উপজেলার ভাঙন কবলিত গ্রামের অনেক পরিবার দুর্দশাগ্রস্ত। ঈদ উপলক্ষে তাদের মধ্যে ১০ কেজি ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ফার্ম আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙন রোধে প্রকল্পটির ব্যয় হচ্ছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৯ টাকা। এর আওতায় বিভিন্ন স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে।