• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আকবর আলি খান ছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর

    আকবর আলী খান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তবে তার চেয়েও বড় কথা তিনি একজন অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং শিক্ষক। সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তাধারার দিক থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও জনমুখী ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে জাতি একজন প্রতিভাকে হারালো। এই প্রতিভাকে এভাবেই স্মরণ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা

    সর্বদা স্পষ্টভাষী, প্রয়াত আকবর আলি খান মুষ্টিমেয় লোকদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা জোয়ারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলেছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটিকে কোনো বিশেষ পরিচয়ে আবদ্ধ করা যাবে না। তিনি ছিলেন একজন অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও শিক্ষক। সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তাধারার দিক থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও জনমুখী ব্যক্তি। এক কথায় বিবেকের কণ্ঠস্বর। এভাবেই আকবর আলি খানকে দেশের সমসাময়িকরা স্মরণ করেন।

    আকবর আলী খানকে হারিয়ে দেশ একজন প্রকৃত অর্থনীতিবিদকে হারালো। গবেষণার জগতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড.

    মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে তিনি আমার তিন বছরের জুনিয়র। আমি ১৯৬৪ সালে সিএসপি অফিসার হিসাবে যোগদান করি, তিনি ১৯৬৭ সালে যোগদান করেন। তার সাথে সরকারি অফিসে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ ছিল না। তবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও আমরা একসঙ্গে কাজ করিনি, আমি সবসময় যোগাযোগ রাখতাম। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে যখনই জাতির সামনে কোনো সমস্যা এসেছে, তখনই তিনি অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে এ বিষয়ে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। এই ভাবনায় কে খুশি না অসন্তুষ্ট তা নিয়ে ভাবতেন না।

    বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল আকবর আলী খানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা উপদেষ্টা পরিষদে (২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ) একসঙ্গে ছিলাম এবং একসঙ্গে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের সময় আলোচনা এবং পরিস্থিতি যেভাবে তিনি বিশ্লেষণ করেছিলেন তা ছিল খুবই যৌক্তিক। তিনি উপদেষ্টা পরিষদে অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। তিনি সত্য কথা বলার সাহস করেছিলেন। যেহেতু তিনি একসময় উচ্চ পদস্থ আমলা ছিলেন, তিনি অনেক কিছু আগে থেকেই বুঝতেন এবং আমাদেরকে সঠিক পরামর্শ দিতেন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেষ জীবনে তাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি খুব বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী ছিলেন। তিনি তার সরকারী কর্মজীবনেও খুব ভাল প্রশাসক ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের শিক্ষক ছিলেন। শুধু শ্রেণীকক্ষে নয়, সমাজেও তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। বাংলাদেশের জন্য তিনি ছিলেন খাঁটি সোনা। আকবর আলি খান একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও পরোপকারী ব্যক্তি ছিলেন। যে কেউ তার সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়েছিল। আমি সারাজীবন তার শূন্যতা অনুভব করব। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা, তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক।

    সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আকবর আলী খানকে একজন দক্ষ ও নীতিনির্ধারক সরকারি কর্মকর্তা, ইতিহাস ও অর্থনীতির গবেষক, রাজনীতির নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক, ক্যালিগ্রাফার, শিক্ষক, নাগরিক সংগঠক ও সমাজচিন্তক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তার সক্রিয় উপস্থিতি বাংলাদেশের সৎ সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে। বিদায় আকবর ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের সিনিয়র ইতিহাস বিভাগের প্রবাদপ্রতিম মেধাবী ছাত্র।

    মন্তব্য করুন