• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আওয়ামী লীগ যাদের প্রতি নমনীয়, জাপা জোটে তারা,বিএনপি জোটের বিকল্পধারা তৈরি করতেই এই উদ্যোগ

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এই রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির দিকে ঝুঁকতে বাধা দিতে এবং বিএনপি জোটের বিকল্প তৈরি করতে সরকারের এই উদ্যোগের ‘সমর্থন’ রয়েছে। তবে জাপা নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখা দলগুলোর সঙ্গেই জোট হবে।

    জাপা সূত্র জানায়, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনপি জোট ছেড়ে যাওয়া মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, হেফাজতের সিনিয়র নায়েব, ত্যাগী নেতাদের একটি দল। জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. ইবনে হাফেজের খেলাফত আন্দোলনের সাথে জোট হতে পারে।

    এসব দলের নেতারাও জাপার সঙ্গে আলোচনার সত্যতা ও নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জাপা এরই মধ্যে এবি পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারিখ নির্ধারণ করা হলেও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি।

    আ স ম আবদুর রাবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহিতা গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি জোট গঠন করেছে। জাপা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপি আবদ্ধ। জাপা তাদের সঙ্গে জোট করবে না। সরকার নমনীয় দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। আলোচনাও চলছে। সরকারের সুরে কথা বলে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ খেতাব পাওয়া জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছেন। এর আগে তিনবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ভোট দেওয়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নির্বাচন ব্যবস্থা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করলেও জাতীয় পার্টি সরকারের নীতির সঙ্গে রয়েছে। . আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না হলে আগামী নির্বাচনে জাপা আওয়ামী লীগের শরিকের ভূমিকা পালন করবে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো শূন্যতা পূরণ করবে জাপা। বিএনপির জোট না এলে জাপা জোট হবে বিকল্পধারা।

    নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা সত্ত্বেও, জাপা ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রায় চারগুণ আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছিল অঘোষিত অংশীদার। আওয়ামী লীগ দলটিকে ২৫টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া জাপা ৩৪টি আসন পেয়ে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলে পরিণত হয়।

    চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির মতো ওই ভোটের সমালোচনা করে দলটি।

    কিন্তু আওয়ামী লীগের ১৩ বছরে ইসলামী আন্দোলন কোনো বাধা ছাড়াই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পাওয়া এই দলের সঙ্গে সরকারের ‘সম্পর্ক’ রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। ইসলামী আন্দোলনের ওয়াজ মাহফিলে অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি-নেতারা। আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু সম্প্রতি দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির হয়েছেন। বিএনপি সম্প্রতি প্রায় সব বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও চরমোনাইতে পীরের দলের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি।

    ২০০১ সালের নির্বাচনে, ইসলামী আন্দোলন (তখন ইসলামিক শাসন আন্দোলন নামে পরিচিত) জাপাকে জোটবদ্ধভাবে ভোট দেয়। আবারও জোট হবে কিনা এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। জাতীয় পার্টি ইসলামী দলগুলোর কাছাকাছি। তবে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

    জাপার সঙ্গে আলোচনা হবে বলে স্বীকার করেছেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। খেলাফত আন্দোলন নিয়ে বৈঠক হয়। জাপার সাথে এখনো বসিনি। সময় ও সুযোগ অনুযায়ী সবার সঙ্গে বসব। জাপার সঙ্গে জোট হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন শুধু মতবিনিময় চলছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে দেখা হবে জোট হবে কি না?

    গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির আয়োজনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতা শুরু হলে সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী হেফাজতের পক্ষে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি কারওয়ান বাজারের বাকুশা জামে মসজিদের খতিব। ওই মসজিদের সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান।

    মন্তব্য করুন