অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা
তৈরি পোশাকের জন্য অস্ট্রেলিয়া অন্যতম অপ্রচলিত বাজার। বাংলাদেশ ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এর অর্থ হল কাতার থেকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) স্থানান্তরের পর বর্তমান রপ্তানি সুবিধা আরও ছয় বছর অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বর্ধিত সময়ের জন্য এই শুল্ক-মুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেতে উত্স নিয়মের কোনও শর্ত মেনে চলার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার দেশটি থেকে আরও তুলা ও উল আমদানির অনুরোধ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা উৎপাদনে খুব কম অস্ট্রেলিয়ান তুলা ও উল ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখান থেকে সরাসরি আমদানি না করে চীনের মাধ্যমে দেশে আনা হয়। এর আগে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার এলডিসির পর আরও তিন বছর বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে বিজিএমইএ নেতারা বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। গত সপ্তাহে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধি দল অস্ট্রেলিয়া সফর করে। সপ্তাহব্যাপী এই সফরে তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কমপক্ষে ১০টি পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মিল্টন ডিক, দেশটির সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী এবং কয়েকজন সিনেটর ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম আলমা সিদ্দিকী এবং বিজিএমইএর কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এসব বৈঠকে অংশ নেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানির সুযোগের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো খবর। কারণ এখন পর্যন্ত আর কোনো দেশ এত দীর্ঘ সময়ের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণা করেনি।
শহীদ উল্লাহ আজিম বলেন, আলোচনায় ‘উইন উইন পলিসি’ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে তুলা ও উলের আমদানি বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে যাতে বাণিজ্যে উভয় দেশই লাভবান হয়। বিজিএমইএ বিষয়টি খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি তুলা ও উল আমদানি করলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গত অর্থবছর ২০২২-২৩-এ প্রথমবারের মতো, অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রপ্তানি ১ বিলিয়ন মাইলফলক অতিক্রম করেছে। মোট ১১৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক দেশে গেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪২ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৮১ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল ৭৩ মিলিয়ন ডলার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি, গত অর্থবছরে প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে, প্রচলিত বিভাগের জন্য একক বৃহত্তম বাজার। জোটের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি ১০ শতাংশেরও কম বেড়েছে। অন্যদিকে, অপ্রচলিত বাজার বিভাগে রপ্তানি বেড়েছে ৩১ শতাংশের বেশি। অপ্রচলিত মধ্যে
ক্যাটাগরির দ্বিতীয় প্রধান বাজার অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি ৪২.৪৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই শ্রেণীর প্রধান বাজার জাপানে রপ্তানি বেড়েছে উচ্চ হারে। গত অর্থবছরে জাপানে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। দেশে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।