অর্থ মন্ত্রণালয় আইএমএফ মিশনকে জানিয়েছে।জুনে আবার বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম
ভর্তুকি কমাতে এ বছর তিনবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনকে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে আরও এক দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে আইএমএফ স্টাফ কনসালটেশন মিশনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে আট সদস্যের মিশন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে তারা আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং পরবর্তী বাজেটে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা জানতে চান। এছাড়াও গত মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের বিভিন্ন পরিকল্পনার অগ্রগতি জানতে চান।
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় দেওয়া হয় ৪৭৬ কোটি ৭০ হাজার ডলার। ঋণের পুরো অর্থ ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। এই ঋণ নিতে বাংলাদেশকে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে সরকারের ব্যয় ক্ষমতা বাড়ানো।
বৈঠকে অর্থ বিভাগ জানায়, সার্বিক ভর্তুকি আইএমএফের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে সারের দাম বাড়িয়েছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও তিনবার বাড়ানো হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দুইবার এবং মার্চে একবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। এর আগে গত নভেম্বরে সরকার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল।
আগামী জুনের মধ্যে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিকে গত আগস্ট মাসে পেট্রোল ও অকটেনের দাম ৫০ শতাংশ এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৬ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি থেকে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, হোটেল-রেস্তোরাঁর গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের জুনে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
এছাড়াও, সরকার বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা সত্ত্বেও কর্মসূচি চলাকালীন এই ভর্তুকি না বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং ভর্তুকি আরও হ্রাস করার উপায় খুঁজছে।
অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অবশেষে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নেট রিজার্ভ প্রায় ২৩ বিলিয়ন। যাইহোক, আইএমএফ অনুসারে বাংলাদেশের নেট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার, সেই অর্থ বাদ দিয়ে যা খুব দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। আগামী জুনের মধ্যে এটিকে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। ইডিএফ-এর আকার কমানো এবং বিশ্বব্যাংক এর মতো উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে জুনের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি নেট রিজার্ভ লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিশনকে বলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। জুনে নিট মজুদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটি তার কাছাকাছি হবে বলে তিনি আশা করেন।
তিনি আরও বলেন, মিশনের সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতি ও মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে আইএমএফ ও গ্রস কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ ঘোষণা করা হবে।