অমর একুশে বইমেলা।শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, আগামীকাল প্রাণের মেলা
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বাঙালি বইপ্রেমীরা, লেখক ও প্রকাশকরা এক বিশেষ উৎসবকে ঘিরে উজ্জীবিত হন। এই উৎসব ‘বাঙালির জীবনের মেলা’ অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে পরিচিত। আগামীকাল ১ ফেব্রুয়ারি ভাষা মাসের প্রথম দিন থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ মেলা শুরু হচ্ছে। ‘বই পড়ি, দেশ গড়ি, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বুধবার খুলে দেওয়া হবে একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩-এর দ্বার। আজ বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মেলাটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরে রং হারিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। গত বছর প্রথা অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু করা যায়নি। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মেলা আয়োজনে কোনো শিথিলতা রাখছে না বাংলা একাডেমি। এ বছর দেড় লাখ বর্গফুট আয়তনে বইমেলা হচ্ছে। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উভয় চত্বরে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে ১৫৩টি স্টল বসানো হবে।
মেলার প্রথম দিনে বাংলা একাডেমি সাতটি নতুন বই প্রকাশ করবে, যার মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে। এদিন তিনি বাংলা একাডেমি ঘোষিত সাহিত্য পুরস্কারও প্রদান করবেন। একাডেমি জানায়, এবার মেলায় শিশু-কিশোরদের উপযোগী প্রকাশনা বিপণনের জন্য তাদের তিনটি প্যাভিলিয়ন ও একটি স্টল থাকবে। যথারীতি প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশু ঘড়ি থাকবে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ উপলক্ষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা, বইমেলা পরিচালনা কমিটির পরিচালক ও সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, জনসংযোগ-তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার, মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নহবত আলী প্রমুখ। এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য দায়ী সংস্থা ক্রসওয়ার্ক কমিউনিকেশনের এমডিএম উপস্থিত ছিলেন। এই জানা যায়।
কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় বইমেলায় প্রবেশের গেটের সংখ্যা কমে গেছে। টিএসসি গেট, রমনা কালীমন্দির ও দোয়েল চত্বরে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। এ বার অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সামনে কোনও প্রবেশপথ তৈরি করা হবে না। তিনি বইমেলায় আগত পাঠক ও ক্রেতাদের দোয়েল চত্বর দিয়ে প্রবেশের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, বইমেলায় পাইরেসি একটি বড় বিষয়। অনেক সময় দেখা যায় একই বিষয়ের ১০-১২টি বই মেলায় আসে। লেখক-প্রকাশকরা মূল প্রকাশক বা লেখকের কাছ থেকে অনুমতি নেন না, বিশেষ করে অনূদিত বইয়ের জন্য। এসব বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। তবে, সুলিখিত, সু-সম্পাদিত বই এখনও দুষ্প্রাপ্য। এর জন্য লেখক, প্রকাশকদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’ বড় প্রকাশকরা তাদের নতুন সব বইয়ের কপি মেলার তথ্য কেন্দ্রে জমা দিতে চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য কেন্দ্রে বই বিশ্লেষণ করে মেলা শেষে মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা জানাই। মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এর জন্য প্রকাশকরা দায়ী। তারা সহযোগিতা করলে, সু-সম্পাদিত বইগুলো তথ্য কেন্দ্রে জমা দিলে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বইমেলার বিশেষ টাস্কফোর্স ১৯টি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। বাংলা একাডেমি তাদের সতর্ক করেছে। এছাড়া মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। মেলা হবে পলিথিন ও ধোঁয়ামুক্ত।
জানা গেছে, এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি নতুন ও পুরাতন ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে। এর মধ্যে প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পথ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেহ নয়চিন-পথ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা-পথ বিশ্লেষণ’, হাসান আজিজুল হকের উপন্যাস ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এর ইংরেজি অনুবাদ। সাবিত্রীর মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হবে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’। এ বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর দর্শনার্থী, ক্রেতা, পাঠক মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। মেলার গেট শুক্রবার এবং শনিবার সপ্তাহান্তে ১১ টায় খোলা হবে।