• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    অবৈধ অর্থ উদ্ধারে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে দুদক

    দুবাই থেকে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি) জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম-এর (ইউএনওডিসি) গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সহায়তা তালিকাভুক্ত করবে। এ লক্ষ্যে কমিশন ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা বিষয়টি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ইউএনওডিসি অফিসে পৌঁছে দেবেন।

    দুদক সূত্রে জানা গেছে, গ্লোব-ই নেটওয়ার্ক এক দেশ থেকে অন্য দেশে দুর্নীতির তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ইউএনওডিসির একটি প্ল্যাটফর্ম। যেসব দেশ এই প্ল্যাটফর্মের সদস্য হবে সেসব দেশকে তথ্য পেতে সাহায্য করবে। এর মুখপাত্র সংশ্লিষ্ট দুই দেশের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন; উভয় পক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় সব ধরনের সহায়তা প্রদান।

    জানা গেছে, দুবাইতে থাকা ৫৪৯ প্রবাসী বাংলাদেশির নামে ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সম্পদের তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতিসংঘের গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।

    দুবাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এ পর্যায়ে দুদকের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, দুবাইয়ে ৫৪৯ জন বাংলাদেশির সম্পদ/সম্পত্তি অর্জনে বিনিয়োগ করা অর্থ বৈধভাবে নেওয়া হয়নি। সব টাকা পাচার করা হয়েছে। পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে দুদক নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। এর একটি অংশ হল UNODC-এর GLOBE-E নেটওয়ার্কের সদস্য হতে। আপনি যদি সেই প্ল্যাটফর্মের সদস্য হন তবে এই অনুসন্ধানটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

    দুবাইতে বাংলাদেশিদের ৩১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ৯৭২টি ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তদন্ত করছে। চলতি বছরের এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু হয়।

    তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিএফআইইউ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) এর মাধ্যমে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সেজন্য কমিশন UNODC-এর GLOBE-E নেটওয়ার্কের সদস্য হতে চায়।

    সরকার ইতিমধ্যেই গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য হতে সম্মত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই ভিয়েনায় ইউএনওডিসি কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে চিঠি পাঠাবে। পরবর্তীতে ইউএনওডিসি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় বাংলাদেশকে গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের সদস্য করা হবে। এর পরে, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, দুবাইয়ের দায়িত্বশীল ফোকাল পয়েন্টের সাথে যোগাযোগ এবং বৈঠক করে অর্থ পাচারের মাধ্যমে কেনা সমস্ত সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ ইউএনসিএসি অনুযায়ী অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

    দুদক সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসাধারী ৫৪৯ বাংলাদেশি দুবাইতে সম্পদ অর্জন করেছেন। আবার, অনেক প্রবাসীর সেকেন্ড হোম স্কিমের অধীনে মালয়েশিয়ায় ফ্ল্যাট/বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া কানাডার বেগমপাড়ায় বাংলাদেশিদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।

    মার্কিন ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিএফএডিএস) গত বছরের মে মাসে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলিতে প্রধানত পাচারের অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পত্তি কেনার বিষয়টি তুলে ধরে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে, ৫৪৯ বাংলাদেশি দুবাইতে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন এবং মোট ৯৭২টি সম্পত্তি কিনেছেন।

    আবাসিক সেক্টরের এই সম্পত্তিগুলির মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনায় এবং ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। অন্তত একশটি ভিলা ও অন্তত পাঁচটি ভবনের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এদের মধ্যে চার-পাঁচ বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক।

    গত ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস হাইকোর্টে রিট করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ দুবাইয়ে ৫৪৯ বাংলাদেশির সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য দুদকসহ চারটি সংস্থাকে নির্দেশ দেন। এদিকে অভিযোগের তদন্তে নানা তৎপরতা শুরু করেছে দুদক। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া বাকি তিনটি সংস্থা হল বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সিআইডি।