• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    অবশেষে, পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হচ্ছে

    অবশেষে পাইপলাইনের মাধ্যমে কুতুবদিয়া থেকে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হচ্ছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো কুতুবদিয়া থেকে পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হবে। গভীর বঙ্গোপসাগরে বাস্তবায়িত ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের আওতায় তেল ছাড়পত্রে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। শুরুতে কিছু যান্ত্রিক সমস্যা ধরা পড়লেও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, গভীর সাগরে নোঙর করা দুটি জাহাজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নিষ্কাশন করা অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল পতেঙ্গাস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা হবে। উদ্বোধনের প্রায় চার মাস পর এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

    লাইটারেজ ছাড়াই পাইপলাইনের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা মাদার ভেসেল থেকে জ্বালানি তেল ছাড়ার জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

    কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় গভীর সাগরে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে, অফশোর এবং অনশোর উভয়ই। এর মধ্যে রয়েছে ১৪৬ কিমি অফশোর পাইপলাইন এবং ৭৪ কিমি অনশোর পাইপলাইন।

     প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে পাইপ লাইন ছাড়াও ১ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত তেল এবং প্রায় ৮০ হাজার টন ডিজেল স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল ওই দুটি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমতো অপরিশোধিত তেল একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এবং ডিজেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি, জুমনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গুপ্তখালের প্রধান ডিপোতে পাঠানো হয়।

    অন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে পতেঙ্গায়। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পে কাজ করছে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে গভীর সমুদ্র থেকে জ্বালানি তেল ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অপরিশোধিত তেল ছাড়া শুরু হলে পাইপ লাইনসহ প্রকল্পে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় তা সম্ভব হয়নি। ত্রুটি সংশোধনের পর,১ ডিসেম্বর, সৌদি আরব থেকে আমদানি করা ৮২,০০০ টন অপরিশোধিত তেল বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান জেটিতে (এসপিএম বয়) বার্থ করা হয়েছিল। জাহাজটি অপরিশোধিত তেল আনলোড করার একদিন পর, আরেকটি জাহাজ ৬০,০০০ টন ডিজেল আনলোড করেছে। অপরিশোধিত তেল এবং ডিজেল ছিল। পাইপলাইনে ছোটখাটো জটিলতার কারণে সেগুলোকে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা যায়নি।

    বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল বলেন, অবিশ্বাস্যভাবে অল্প সময়ের মধ্যে কুতুবদিয়া থেকে জ্বালানি তেল পতেঙ্গা পৌঁছাবে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। বছরে অন্তত ৮ বিলিয়ন টাকা সাশ্রয় হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি ও তেল পরিবহন মান্দাতার আমলের ধারণা পাল্টে যাবে এবং বিশ্বমানে উন্নীত হবে। বছরের পর বছর ধরে, বাহ্যিকভাবে নোঙর করা মাদার ভেসেল থেকে লাইটারেজের মাধ্যমে তেল পরিবহন করা হতো। এখন এই লাইটারেজ জাহাজের খরচ পুরোপুরি সাশ্রয় হবে। এছাড়া একটি জাহাজ থেকে তেল আনলোড করতে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে, যা আগে ১৫ দিন লাগত।

    ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান গতকাল বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হবে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাসহ সার্বিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলেও মন্তব্য করেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান।