জাতীয়

অন্ধকারে জ্বালানী খাত

জ্বালানী তেলের চাহিদার প্রায় সবই আমদানি করা হয়। রান্নার গ্যাস অর্থাৎ বোতলজাত এলপিজির চাহিদা আমদানির মাধ্যমেও মেটানো হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যাপকভাবে আমদানি করা হচ্ছে। কয়লাও আমদানি হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য।তবে দেশের কয়লা খনিগুলি বড়পুকুরিয়া বাদে অলস পড়ে আছে। সেই কয়লা তোলার কোনো দরকার নেই। সাগর ও স্হলভাগের  গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর কোনও তৎপরতা নেই। গার্হস্থ্য কয়লা ও গ্যাস সম্পদ ছাড়াও এখন আমদানিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশীয় কয়লা আর কাজে আসবে না। কারণ বিশ্বব্যাপী কয়লার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য সত্ত্বেও গ্যাস ও কয়লা সহ জ্বালানি খাত এখনও অন্ধকারে রয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র গ্যাস উত্তোলনের উপর জোর দিয়ে ১৯৭৪ সালে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার হত্যার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সরকারের আমলে সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে এর কোন উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি। একমাত্র সাফল্য উপকূলের সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র। এখান থেকে গ্যাস উত্তোলনও ২০১৩ সালে শেষ হয়েগেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথে সামুদ্রিক বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলের মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের মালিক হয়ে যায়।

এই বিশাল সমুদ্র অঞ্চল থেকে সম্পদ আহরণে এখনও কম অগ্রগতি রয়েছে। তবে মিয়ানমার বঙ্গোপসাগর থেকে গ্যাস রফতানি করছে। ভারত তাদের প্রান্তে গ্যাসও আবিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সরকারের আমলে সমুদ্রকে অবরুদ্ধ করে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বিদেশী সংস্থাগুলি কমবেশি সাড়া ফেলেছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও তেল বা গ্যাস আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়নি।উৎপাদন ভাগাভাগির চুক্তির (পিএসসি) অনুমোদনের পর এই বছরের শেষের দিকে সমুদ্রের তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলার নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দামের অবিচ্ছিন্ন হ্রাস যে কোনও বড় সংস্থার অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। সূত্র বলছে যে করোনার কারণে বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম মারাত্মকভাবে নেমে এসেছে। সমুদ্রের গ্যাস পাওয়া গেলে বাংলাদেশ উত্পাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে গ্যাস আমদানি করতে সক্ষম হবে। ফলস্বরূপ, বঙ্গোপসাগরের কোনও নামকরা সংস্থা তদন্তে রাজি হবে বলে মনে হয় না।দেশে গ্যাসের ঘাটতি নতুন বিষয় নয়। শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিক সহ সকল সেক্টরে এই জ্বালানির জন্য চিৎকার রয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে চারগুণ দামে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে কখনও নিবিড় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি। জমি অনুসন্ধানও ধীরে ধীরে চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বিশাল গ্যাস বিদ্যুতের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে গভীর সমুদ্রের গ্যাস গভীর থাকে।জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিবৃতি: প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ  বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম হ্রাস পাওয়ায় বিদেশি সংস্থাগুলি বঙ্গোপসাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান করতে নারাজ। তারা গ্যাসের দাম বাড়াতে বলছে। একবার চুক্তি হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করা যায় না। নতুন মডেল পিএসসিতে (উত্পাদন-বিতরণ চুক্তি) গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। জুনের মধ্যে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও বলেন, জমিতে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া হচ্ছে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশী সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে। দাম কম থাকায় বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। প্রয়োজনমতো এই আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগও রয়েছে।

মন্তব্য করুন