অনুমোদন ছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে ব্যবস্থা: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
অনুমোদন ছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সমিতি তাদের চিঠিতে লিখেছে, অনুমোদন না পেলেও আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য কার্যকর করবে তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সাম্প্রতিক চিঠিতে বলা হয়েছে, বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম নয় টাকা এবং পাম তেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানো হবে। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে নতুন দর কার্যকর করবে কোম্পানিগুলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো যাবে না। কারণ এই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করে থাকে। আইন অনুযায়ী কোম্পানি নিজে থেকে দাম বাড়াতে পারে না। কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে পারে। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি যুক্তিসঙ্গত কিনা তা বিশ্লেষণ করতে ট্যারিফ কমিশনে পাঠায়। ট্যারিফ কমিশন আন্তর্জাতিক বাজার এবং পরিবহন খরচ সহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি পক্ষে ভোট দিলে দাম বেড়ে যায়; কমিটিও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া আছে এবং তা বৈধ। প্রক্রিয়ার বাইরে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যদি কোনো পক্ষ তা হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারের কাছে শুল্ক, ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ, বাজার মনিটরিং কমিটির মতো বিভিন্ন ‘সরঞ্জাম’ রয়েছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’ ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো দাবি করেছে যে তারা বর্তমানে যে ভোজ্যতেল বাজারে ছাড়ছে তা গত বছরের সর্বোচ্চ দামে কেনা হয়েছে। ফলে দাম না বাড়লেও লোকসান হবে। কিন্তু অনেক সময় বিশ্ববাজার থেকে কম দামে প্রক্রিয়াবিহীন তেল তারা স্থানীয় বাজারে কমায় না। গত এক বছরে কয়েক দফা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও কোম্পানিগুলো দাম কমায়নি। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার বাড়ছে। প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে জনগণের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়াতে চায় না সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, টানা চার মাস ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৯৭ শতাংশ, যা ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয় এমন কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে না। টিসিবি জানায়, এক বছরে বিভিন্ন ধরনের ভোজ্যতেলের দাম ২৪ থেকে ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর বাজারে সয়াবিন বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ট্যারিফ কমিশনের মতে, দেশটি বছরে প্রায় ২ কোটি টন ভোজ্য তেল ব্যবহার করে এবং চাহিদা মেটাতে ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।