অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগের কী হবে? পাবিপ্রবির উপাচার্য রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ
অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও ব্যর্থতার ব্যাপক অভিযোগের মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পুস্ট) উপাচার্য এম রোস্তম আলীর চার বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি দুর্নীতি করব না, কাউকে করতে দেব না। তবে তার শাসনামলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে দুর্নীতির অনেক প্রমাণ মিলেছে। এখনও ১০১টি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ অমীমাংসিত রয়েছে। এসব বিষয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে উপাচার্যের পুরো মেয়াদে ক্যাম্পাসে উত্তাল ছিল। সেই ১০১টি অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছেন বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল আলিম। দাবি আদায়ে তিনিও একাই মাঠে নেমেছেন। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগের কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপাচার্য এম রোস্তম আলীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন । তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রোস্তম আলী বিভিন্ন আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তিনি তার আগের ভাইস-চ্যান্সেলরের সময়ে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা থেকে অনৈতিকভাবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখে তা ফেরত দিয়েছিলেন। কোটি টাকার অনিয়মের দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত হওয়া আবদুর রহিমকে ৫০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে পরে তার চুক্তিতে নিয়োগ বাতিল করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় কেনা কোটি টাকার গাড়িটি তার ছেলেকে ব্যবহার করতে দেন উপাচার্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে অনিয়ম পাওয়া গেলে তিনি গাড়িটি ফেরত দেন। ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে উপাচার্যের কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চেয়েছেন। ফলে তিনি ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হন। এ ছাড়া বাসা ভাড়া বাকী, অনিয়মিতভাবে সিনিয়র অধ্যাপক পদে পছন্দের লোক নিয়োগসহ নানা অভিযোগ ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্ছেদকৃতরা টাকা ফেরত দেন এবং সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ বাতিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ডিন-চেয়ারম্যান নিয়োগসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়মও প্রমাণিত হয়েছে।
গত মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে বিভিন্ন পদে ১০২ জনকে নিয়োগ দেন উপাচার্য। নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হারুন-উর-রশিদসহ একাধিক চাকরি প্রার্থী মো. উপাচার্যের ভাতিজি কানিজ ফাতেমা কাকন, ভাতিজি হাসিবুর রহমানসহ অন্তত ১২ আত্মীয়কে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে উপাচার্য নিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন নেওয়া, ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও ১০ কোটি টাকার বই কেনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা উপাচার্যের পুতুলও পোড়ায়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপাচার্য সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে সভা বাতিল করা হয়। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। কয়েকদিন পর তিনি ক্যাম্পাসে আসলেও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে নীরবে চলে যান। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবিতে রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কর্মকর্তা বোর্ডের সভাপতি হারুনর রশীদ ডন বলেন, ‘নানাভাবে আশ্বাস দিলেও তিনি (উপাচার্য) নিজের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে সংকটে ফেলেছেন। একজন উপাচার্যের জন্য এটা কাম্য নয়।’
ঘটনাস্থলে একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সুবিধাবাদী চক্র গড়ে উঠেছে এবং যেই উপাচার্য আসুক না কেন তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান অনেক নিচে নেমে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ইউজিসি র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকে রয়েছে। তারা অধ্যাপক রোস্তমের মেয়াদ শেষ হলেও তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।
রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, রেজিস্ট্রার অফিস তালাবদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলেননি।